আদর্শ না সুবিধা: ক্রান্তিকালে ইসলামপন্থীদের ভবিষ্যৎ কোথায়?

নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসলামপন্থীদের সামনে আশাজাগানিয়া কোনো বার্তা দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা এই ইন্টেরিম সরকারকে নানাভাবে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন, তাঁদের অনেকে এখন স্পষ্টত হতাশ। তাঁরা ভেবেছিলেন, এই সরকারই হয়তো ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি সহনশীল থাকবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করে না—বরং তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে চলাই যেন নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত এনসিপি। বৃহৎ জনভিত্তির কারণে হয়তো বিএনপির সাথে সরকার আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন বোধ করে। চরমোনাইয়ের দলকেও বিশেষ উপলক্ষে ডাকা হয়। তবে বাকি ইসলামী দলগুলোকে সরকার ও মূলধারার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে। তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না, কথা শোনা হয় না।

এরপরও সরকারের প্রতি ইসলামপন্থীদের একাংশের সমর্থন এখনও অটুট রয়েছে—ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে, এমন প্রত্যাশা থেকেই। তবে সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে—সে সমর্থনে ভাটা ফেলছে। দিন দিন হয়তো এ ভাটার প্রবণতা আরও বাড়বে। কিন্তু তাতে সরকারের খুব একটা ক্ষতি হবে না, কারণ আন্তর্জাতিক সমর্থনের ছাতায় তাদের অবস্থান বেশ দৃঢ়। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের মিছিল-মিটিং কিংবা কঠোর বক্তব্যও সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে না—বরং উল্টো আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের “সহিষ্ণুতা” এবং “ধর্মনিরপেক্ষতা”র ভাবমূর্তি আরও জোরদার হবে।

জুলাই বিপ্লবের পর ইসলামী দলগুলোর সামনে একটি বড় সুযোগ এসেছিল নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠনের। কিন্তু তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, এবং ‘হালাল বনাম দালাল’ বিতর্ক—এসব কিছু মিলিয়ে তারা একটি শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। ঐক্যের নামে কিছু লোকদেখানো বৈঠক, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনের সভায় অংশগ্রহণ, আর গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতির বাইরে কার্যকর কোনো কৌশল নিতে তাদের দেখা যায় নি।

আজকের বাস্তবতা হলো, অনেক ইসলামপন্থী দলই আদর্শ থেকে সরে এসে সুবিধাবাদী রাজনীতিতে মগ্ন। কেউ কেউ ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীন দলের অনুগত থেকে সামান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় রাজনীতি করছে। কারো কারো মাথায় এমপি হওয়ার স্বপ্ন। এসবই আদর্শবাদী রাজনীতির মৃ’ত্যু ঘটাচ্ছে এবং ইসলামপন্থীদের ক্রমশ একটি আত্মবিনাশী পথের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই পতন শুধু দলীয় রাজনীতির নয়—সমগ্র ইসলামী শক্তির জন্যও তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ, ইসলামপন্থীদের রাজনীতির দুর্বলতা এবং আদর্শহীনতা যদি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ধর্মীয় অনুশাসনের শক্তিটিও ক্রমশ লোপ পাবে।

এখনো সময় আছে। ইসলামপন্থীদের নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তাদের ভাবতে হবে—তারা কি আদর্শে অটল থেকে বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে, নাকি বিভক্তি ও ভ্রান্তির গর্তে আরও তলিয়ে যাবে? প্রয়োজন নেতৃত্বে পুণর্গঠন, কৌশলে নবচিন্তা, এবং সর্বোপরি আন্তরিক আত্মসমালোচনা। সময়ের দাবি হলো—শক্তিশালী, সংগঠিত, আদর্শনিষ্ঠ এবং বাস্তববাদী একটি ইসলামী ধারার পুনর্জন্ম। তা না হলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে জায়গা করে নিতে খুব বেশিদিন লাগবে না।

✍️ আনসারুল হক ইমরান
সম্পাদক, নূর নিউজ ২৪

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আল্লাহর অতি প্রিয় যে ১২ আমল

আনসারুল হক

মাদরাসার ছত্রদের ইংরেজি শেখার প্রতি দৌড় ঝাপঃ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি না তো ? 

নূর নিউজ

দেবীদ্বারে বিদ্যুৎস্পর্শে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু

আনসারুল হক