গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে একমত পোষণ করলো বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার- অভিন্ন মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন- দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটাই বলা হয়েছে ব্রাসেলসে সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ ও ইইউ চতুর্থ কূটনৈতিক সংলাপে। ২৬শে অক্টোবরের দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরকিছু ধারার অপব্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ। বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলায় প্রণীত আইনটির কিছু ধারা এর প্রকৃত উদ্দেশ্যের বাইরে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কয়েকটি মামলার চলমান বিচারকার্য সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে ইইউ।

বিবৃতি মতে, বৈঠকে উভয় পক্ষ কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জোরদারে সম্মত হয়। একই সঙ্গে যেকোনো জায়গায় যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং বৈষম্যের নিন্দা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর পটভূমিতে গঠনমূলক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি হয় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়- এতে উভয় পক্ষ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাণিজ্য, অভিবাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে।

বৈঠকে ইইউ এবং বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। তাছাড়া জলবায়ু, ডিজিটালাইজেশন, সংযোগ ও নিরাপত্তা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা হয়। আগামী দিনে উভয়ের মধ্যে নিয়মিত রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনে ঐকমত্য হয়। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি সামলে ওঠার জন্য ৩৩৪ মিলিয়ন ইউরো প্রদানের ঘোষণা দিয়ে ইইউ জানায়, এই তহবিল রপ্তানিমুখী শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। করোনাকালে বাংলাদেশকে মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। জবাবে ইইউ আলাদাভাবে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১০ লাখ ডোজ টিকা প্রদানের অঙ্গীকারের কথা জানায়। বৈঠকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে করোনার টিকার সহজলভ্যতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে তা পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয় বাংলাদেশ।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিটে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করে ইইউ। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সমর্থনের আগ্রহ প্রকাশ করে ইইউ। বিশেষ করে আঞ্চলিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রটি কীভাবে বিস্তার করা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার তাগিদ দেয়া হয়। উভয়পক্ষই প্যারিস চুক্তির অধীনে পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। পাশাপাশি ইইউ বাংলাদেশকে একটি সবুজ অংশীদারিত্ব বিবেচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যা নিয়ে ২০২২ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় একটি সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে উভয়ে সম্মত হয়।

বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়নে প্রস্তাবিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং এর প্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে ইইউ নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী এর বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে। জবাবে বাংলাদেশ পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের অনুরোধ করেছে। ইউরোপে অনিয়মিত হয়ে পড়া অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ব্রাসেলস বৈঠকে। বিবৃতিতে বলা হয়- ভিসা কোডের ২৫-এ অনুচ্ছেদের অধীনে ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং প্রত্যাবর্তনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইইউ। একই সঙ্গে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয়ের দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেছে ইইউ। উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর মধ্যে সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার জন্য ইইউ নতুন কৌশল উপস্থাপন করেছে। উভয় পক্ষই মিয়ানমার ও আফগানিস্তানসহ এইঅঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে জাতিসংঘের ফোরামে সন্ত্রাস দমন ও সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ এই নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে ২০২৩ সালে ঢাকায় পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তাব করেছে। বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ইউরোপীয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুনার উইগ্যান্ড এবং বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এদিকে বুধবার ঢাকায় কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান ডিকাব টকে অংশ নিয়ে বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যটার্টন ডিকসন বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বৃটিশ দূত মনে করেন,এমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফর্মুলা খুঁজতে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই, তা বাংলাদেশের সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া

নূর নিউজ

অবশেষে সময় বাড়লো বইমেলার

নূর নিউজ

বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

নূর নিউজ