জানালা নেই, তবু আলোকিত আস-সালাম মসজিদ

আধুনিক যুগে চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যের জটিল সংমিশ্রণ আর দৃষ্টিনন্দন এক অনন্য স্থাপনা আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি।

নজরকাড়া নকশায় নির্মিত এ মসজিদটি বাংলাদেশে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর অনন্য নজির।

স্থাপনাটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে প্রতিদিন লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু দর্শনার্থী ছুটে আসছেন এ মসজিদটি দেখার জন্য।

শুধু নকশায় নয়, বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে এ মসজিদে। যা বাংলাদেশে অন্য কোনো মসজিদে চোখে পড়ে না বলে জানান দর্শনার্থীরা।

এ মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দোতলায় কোনো জানালা নেই। শুধুমাত্র মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রয়েছে দু’টি দরজা। কোনো জানালা না থাকলেও বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই মসজিদটি সব সময়ই আলোকিত থাকে।

জানা গেছে, বাংলাদেশি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমীন ও তার দল মসজিদটির নকশা তৈরি করে। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১০ হাজার ৮শ’ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদ নির্মাণ করান স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মসজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- সেখানে ইবাদত করতে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে বসেই রোদ, বৃষ্টি এবং কুয়াশার দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। কারণ এ মসজিদটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর ভেতরে রোদ ও বৃষ্টি সরাসরি এসে পড়ে। তবে মুসল্লিরা বৃষ্টিতে ভিজবেন না এবং রোদেও পুড়বেন না।

গরমের সময় মসজিদকে শীতল করার জন্য ভেতরে রয়েছে বৃষ্টির পানি ও পানি সংরক্ষণের জন্য চারটি জলাধার। জলাধারগুলোতে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল করে রাখে। দোতলা এ মসজিদটির নিচতলা দু’ভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পেছনে মাঝ বরাবর গলিপথ। তার দুই পাশে শীতল জলাধার এবং রোদ, বৃষ্টির পবেশ পথ। মুসল্লিদের জন্য একটি প্রশান্তিময় স্থান তৈরি করতে মসজিদে নরম প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। পেছনের অংশে বড় গ্যালারির মসজিদ। যেখানে বসে মুসল্লিরা নিজ মনে ইবাদত করতে পারেন। গ্যালারি অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলায় রয়েছে নারীদের নামাজ পড়ার স্থান।

এ মসজিদটির ছাদ প্রচলিত অন্য স্থাপনার থেকে আলাদা। পুরো মসজিদের দেয়ালটিতে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় পুরো দেয়াল ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রনে আরসিসি ঢালাই। পুরো মসজিদে একসঙ্গে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহার করা হবে আস-সালাম মসজিদ।

এ স্থাপনাটি বিগত একশ’ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে নির্মিত স্থাপত্যের মধ্যে একটি বিরল স্থাপনা বলে জানান নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা।

দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি দেখতে আসা মো. আক্তার আলম, জাবেদ হোসেন ও বেলাল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ মসজিদের বিষয়ে জানতে পেরে দেখতে এসেছি। আধুনিক যুগে তৈরি এ ধরনের স্থাপনা আগে কোথাও চোখে পড়েনি। স্থাপনাগুলোর কারুকার্জ এবং নির্মাণ শৈলী দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সাধারণত মুঘলদের স্থাপনাগুলো এ ধরণের নকশার সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়।

এদিকে এ মসজিদকে ঘিরে তৈরি হওয়া শিক্ষা কমপ্লেক্সের মধ্যে আস-সালাম হাফেজিয়া মাদরাসটিকে হাফেজি ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে।

রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জানান, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বলেন, আমাদের উদ্যোগের প্রথম স্থাপনা মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় উদ্যোগ হাফেজিয়া মাদরাসাটি ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সাল থেকে বালিকা বিদ্যালয় চালু হবে। পরের দুই-তিন বছরের মধ্যে কলেজও চালু হবে।

হাফেজি এবং ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসাটিতে প্রতি ব্যাচে ৬০ জন ছেলে, ৪০ জন মেয়ে এবং ২০ জন হাফেজ হবেন। বিনা অর্থে মাদরাসাটিতে হাফেজির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক মানের এ মাদরাসাটি থেকে ভবিষ্যতে যারা হাফেজ হয়ে বের হবেন, তারা পৃথিবীর যে কোনো দেশে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিতে পারবেন বলে জানান মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

মহিলা মাদ্রাসার উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

নূর নিউজ

সিলেটে সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাওলানা মাহমুদুল হাসান

নূর নিউজ

পদ্মা সেতুতে আবারো ফেরির ধাক্কা

নূর নিউজ