আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা করছে ইসলামী দলগুলো। ইতোমধ্যে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইসলামী দলকে একই প্ল্যাটফর্মে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবারের জনসভা তারই প্রমাণ দেয়।
রেজাউল করীম বলেন, ইসলামপন্থিদের ঐক্যের ব্যাপারে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। জোটবদ্ধ ইসলামি দলগুলো হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার দাবি করে তিনি বলেন, যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের তত আসন থাকতে হবে। এটি জনগণের, জেনজি প্রজন্মের এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের যৌক্তিক দাবি। প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিতে হবে।
চরমোনাই পীর বলেন, বারবার রক্ত দিয়েছি, কিন্তু সফলতা পাইনি, কারণ ভুল নেতা ও নীতির হাতে দেশ তুলে দিয়েছি। এবার ইসলামপন্থীদের ঐক্যের সময় এসেছে। এক বাক্সে ভোট নিলে ইসলামপন্থীরাই হবে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে আছি। তবে সরকার যেন সংস্কার ও নিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত না হয়।
যেসব দলের নিবন্ধন এবং ভোটব্যাংক রয়েছে সেসব দলই এই সমঝোতা প্রক্রিয়ায় থাকছে। অর্থাৎ ৮টি ইসলামী দলের মধ্যে সমঝোতা হবে। মধ্যপন্থি দল, যেমন এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও (এনসিপি) জোটে আনার ক্ষেত্রে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমঝোতা বা নির্বাচনী জোটের কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হলে সবকিছু দৃশ্যমান হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় থাকছে না অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ‘বিএনপির সঙ্গে জোট’ গড়ার পক্ষে সংগঠনটি।
গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশে রাজনীতির চিত্র বদলে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ‘নির্ধারণ’ হওয়ায় বিএনপিসহ মিত্ররা সন্তুষ্ট। এর পরই নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেমেছে বিএনপিসহ দলগুলো।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা করতে চায় জামায়াতের ইসলামী। সেক্ষেত্রে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও পাশে চায় তারা। এরই মধ্যে উভয় দলের মধ্যে বেশ কিছু বৈঠক হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর এক সময়ের কট্টর সমালোচক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্বাচনী সমঝোতা প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
কেননা, একসময় জামায়াত নিয়ে কট্টর সমালোচনা করেছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা। জামায়াতে ইসলামী ‘কোনো ইসলামী দল নয়’ এমন কথাও বলেছেন তারা। যদিও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দেশ ও উম্মাহ এবং ইসলামের স্বার্থে কোনো সমালোচনা বা প্রতিবন্ধকতা নির্বাচনী সমঝোতাকে ঠেকাতে পারবে না। এখন আর অতীত নিয়ে পড়ে থেকে লাভ নেই।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশের ইসলামিক পণ্ডিত ও আলেম-উলামা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, এবারের নির্বাচনে সব ইসলামী শক্তির মধ্যে একটা নির্বাচনী ঐক্য থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে অচিরেই একটা সমঝোতা হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।’
জামায়াত নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও একসঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা কী করে হবে—এ প্রশ্নের উত্তরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এবং দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করছি। সেটি শুধু ভোটের জন্য। বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছি। তা ছাড়া বিএনপিও তো জামায়াত নিয়ে বহুবার বহু কথা বলেছে, সমালোচনা করেছে। তবুও তো বিএনপি-জামায়াত জোটও করেছিল। সুতরাং নির্বাচনী সমঝোতার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।’
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অতীতে কে কী বলেছে সেটি খুব একটা বিবেচ্য নয়। বরং দেশ এবং উম্মাহর স্বার্থে আগামীতে ভালো কী করা যায়, সেটিই মুখ্য। গতানুগতিক চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এখন বৃহত্তর স্বার্থে সবার মধ্যে দায়িত্ববোধের সূচনা হয়েছে। দলের নাম আলাদা হতে পারে, কিন্তু ইসলাম তো সবাই চায়।’