ভাষা ও মাতৃভাষার বিশুদ্ধতা শরীয়তের কাম্য: মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি একটি রাজনৈতিক ঘটনার কারণে বাংলা ভাষার বিষয়টি ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করা হয়েছে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে দেশব্যাপী ভাষাকৃন্দ্রিক তৎপরতা নতুন মাত্রা লাভ করে। সময়ের গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে না গিয়ে আমাদের কর্তব্য সকল পরিস্থিতিতে যথার্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান অক্ষুন্ন রাখা।

ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষা চর্চা ও বিশুদ্ধ ভাবে কথা বলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। যেসব গুণ মানুষের ব্যক্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে তার মধ্যে বিশুদ্ধ ভাষণ ও সুস্পষ্ট উচ্চারণ অন্যতম। শ্রোতাদের উপর বক্তব্যের প্রভাব অনস্বীকার্য। জনগণকে মাতৃভাষায় বিশুদ্ধ ও সুন্দর উচ্চারণে বোঝানো দরকার। নেতৃত্বের একটা বিশেষ গুণ হলো সুন্দরভাবে বক্তব্য দেওয়ার দক্ষতা। ভাষার উপর দখল থাকলে শ্রোতার উপর বক্তব্যের প্রভাব অনেক বেশি হয়। দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও পরিচিতি মাতৃভাষা চর্চার উপর নির্ভরশীল। যে বিধি-বিধান বা ধর্মীয় অনুশাসন মানবজাতিকে আল্লাহর পথে, সত্য ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে নেয় এবং জীবনকে ঐশী জ্ঞানের আলোকে আলোকে আলোকিত করে সেই বিশাল জ্ঞান ভান্ডার পবিত্র কোরআন ও হাদিসসহ অন্য বহুমূল্যবান ধর্মীয় গ্রন্থ মাতৃভাষা বাংলায় অনুবাদ হওয়ায় আজ আমরা জ্ঞানের নব-দিগন্তে এগিয়ে চলেছি।

পরস্পরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করা, সৎ কাজ করা এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকা বা বাধা প্রদান করা, ধর্মের বিধি-বিধান প্রতিপালন করা, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমেই সম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে, মাতৃভাষা মানবজাতির জন্য আল্লাহর দেয়া সুমহান নেয়ামত। তাই সৃষ্টিকর্তার পরম কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বিশুদ্ধ মাতৃভাষার চর্চায় নৈপুণ্য আনয়ন ও বিশেষ দক্ষতা অর্জনে অত্যন্ত সচেষ্ট হতে হবে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও অনস্বীকার্য অপরিসীম গুরুত্বের সাথে স্মরণ করে ইসলাম। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের কাছে যুগে যুগে যেসব আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন তা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার জাতির লোকদের মাতৃভাষাতেই প্রেরণ করেছি। (সূরা: ইব্রাহীম-৪)। যেমন আল্লাহর প্রেরিত প্রধান চার কিতাবও অবতীর্ণ হয়েছে প্রেরিত রাসূল ও জাতির মাতৃভাষায়। হযরত মূসা (আ.) এবং তাঁর জাতি ইহুদিদের মাতৃভাষা হিব্রু ছিল বলে তার প্রতি অবতীর্ণ তাওরাতের ভাষা ছিল ইবরানি বা হিব্রু। হযরত ঈসা (আ.) ও তার জাতি খ্রিস্টানদের মাতৃভাষা গ্রিক ছিল বলে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ইঞ্জিলের ভাষা ছিল সুরইয়ানি বা গ্রিক। হযরত দাউদ (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ যাবুরের ভাষা ছিল ইউনানি। শেষ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাতৃভাষা আরবি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোরআন অবতীর্ণ হয় তার ভাষা আরবি।

মাতৃভাষা প্রত্যেকের নিকটই সুমহান। তাই যেকোন ভাষাকেই অন্য দৃষ্টিতে বা ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বস্তুতঃ মুসলিম মননে মাতৃভাষাপ্রীতি সঞ্চারিত হয়েছে ইসলামের মাতৃভাষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপের কারণেই। সুতরাং নিজ মাতৃভাষা বাংলার স্বকীয়তা রক্ষা করা অপরিহার্য বিষয়। পবিত্র কুরআন মজিদ ও হাদীসে নববী কথা ইসলামের আলোকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সৎ মনোভাব প্রকাশের দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং সর্বোপরি বিশ্ব মানবতার কল্যাণে মাতৃভাষা চর্চা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে সবাইকে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক:
পরিচালক, আন-নূর কালচারাল সেন্টা, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
পরিচালক: নূর নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম

এ জাতীয় আরো সংবাদ

‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে’

আনসারুল হক

ঐকমত্য কমিশনের ১৪৫ প্রস্তাবে একমত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

আনসারুল হক

রোববার কয়েক ঘণ্টার জন্য গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি

আনসারুল হক