হজ নিয়ে এ সপ্তাহের জুমার বয়ানে যা বললেন আল্লামা রাব্বানী

গুলিস্থানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতীব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুতবায় বলেন, হজ্ব হচ্ছে এমন একটি ইবাদত যা আদায় করতে দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হতে হয়। আভিধানিকভাবে হজ্বের অর্থ হলো “ইচ্ছে করা”। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পাদন করার নাম হচ্ছে হজ্ব।

আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন,
“মানুষের উপর আল্লাহর বিধান ঐ ঘরের হজ্ব করা, যার আছে সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য। আর কেউ কুফর করলে আল্লাহ তো বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।” (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)

হাদিসের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, “পাঁচটি ভিত্তির উপর দ্বীনে ইসলাম স্থাপিত। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল। (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) বায়তুল্লাহর (কা’বা গৃহের) হজ্জ করা এবং (৫) রমযানের রোযা পালন করা।” (বুখারী ৮, মুসলিম ১২২)

হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।
১/মুসলিম হওয়া।
২/আকল থাকা—অর্থাৎ বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া
৩/বালেগ হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৪/আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া।
৫/দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।

খতীব আরো বলেন, হজ্ব পালন করা একটি বৈশ্বিক ইবাদত।
আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন,
“মক্কাতেই মানবজাতির জন্য সর্ব প্রথম ঘর তৈরি হয়েছিল। ঐ ঘর বিশ্ববাসীদের জন্য হেদায়াত ও বরকতের উৎস।” (সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬)

খতীব আরো বলেন, বাইতুল্লাহ যেমনিভাবে বৈশ্বিক তেমনিভাবে কুরআন কারীমকেও আল্লাহ তা’লা বৈশ্বিক বানিয়েছেন।

আল্লাহ তা’লা বলেন, “এটি (কুরআন কারীম) সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি উপদেশ ছাড়া আর কিছুই নয়” (সূরা আনআমঃ ৯০)

এবং রাসূল (সাঃ) কেও আল্লাহ তা’লা বৈশ্বিক রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন, “এবং আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৭)

এতে বুঝা গেল, রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তা’লা বাইতুল্লাহকে হজ্ব, উমরাহ ও ক্বিবলাহ হিসেবে ও কিতাবুল্লাহকে আমাদের জীবন-বিধান হিসেবে এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে আমাদের উত্তম আদর্শ হিসেবে বৈশ্বিক বানিয়েছেন।

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তিকে কোন সুস্পষ্ট প্রয়োজন বা অন্যায় শাসক বা কঠিন রোগের কারণে হজ্ব করা থেকে বিরত রাখা হয় না এবং সে হজ্ব না করেই মারা যায়, সে যদি চায় তবে সে মারা যাক একজন ইহুদী বা একজন খ্রিস্টান হয়ে। ”
(আল-দারামি এবং আল-বায়হাকি)

তিনি আরো বলেন, বছরের বারো মাসের চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। এই চার মাসের অন্যতম হলো জিলহজ্ব মাস। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৩৬)। এই চার মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

অতএব, আমরা যারা এই চার মাস পাবো, তাদের উচিত উক্ত চার মাসের হক্ব যথাবিহিত আদায় করা। সর্বোপরি,
যাদের উপর হজ্ব ফরজ হয়েছে, আল্লাহ যেন তাদেরকে দ্রুত হজ্ব পালন করার তৌফিক দিন এবং অন্য সকলকেও এই মহান ও পবিত্র ইবাদত পালনের তৌফিক দান করেন! আমিন!

এ জাতীয় আরো সংবাদ

স্ত্রীর সাথে যেমন আচরণ করতে বলেছে ইসলাম: মাওলানা তারিক জামিল

নূর নিউজ

জুমার দিন যে আমল করলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবেন

নূর নিউজ

মসজিদে নববীতে সেলফি তোলা নিয়ে যা বললেন শায়খ সুদাইস

নূর নিউজ