- নাজমুল হুদা মজনু
দুনিয়ার হাজারো আকাঙ্ক্ষায় ব্যস্ত মানুষ মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অহরহ ভুল পথে পা বাড়ায় । মহান স্রষ্টা ও প্রতিপালকের সহজ-সরল পথ ছেড়ে সমস্যা-সঙ্কটে আশ্রয় খোঁজে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায়; কিন্তু মানুষ যখন পথভ্রষ্ট হয় তখন সে হাঁটতে থাকে উল্টো দিকে। তার হিতাহিত জ্ঞান লোভ পায়। পেছনের দিকে চলতে চলতে একপর্যায়ে খাদে পড়ে আর্তচিৎকার করতে থাকে। তবে তখন আর তাদের উদ্ধারে কেউ হাত বাড়ায় না। যার প্ররোচনায় পাপের পঙ্কিলতায় হাবুডুবু খায় সেই ইবলিশ শয়তানও তখন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। আসলেই অবিশ্বাসীরা বড় অসহায়।
মুমিন বান্দাদের অবস্থা অন্যরকম; বিতাড়িত শয়তানের ধোঁকায় সাময়িক বিপথগামী হলেও মহান দয়াময় প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তখন তাদের সুপথ দেখান। কিন্তু যারা কাফের অর্থাৎ অবিশ্বাসী তাদের অবস্থা হ য ব র ল। কোনো দিকেই তাদের ঠাঁই নেই। দুনিয়ায় তারা যেমন অসহায় আখেরাতে এর চেয়ে আরো বেশি বিপদগ্রস্ত।
উল্লেখিত বেঈমানদের ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (হে নবী) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে সেসব (বিদ্রোহী) কাফেরদের তুমি বলে দাও, অচিরেই তোমরা (এ দুনিয়ায় লাঞ্ছিত) পরাজিত হবে এবং (পরকালে) তোমাদের জাহান্নামের (আগুনের) কাছে জড়ো করা হবে; (আর জাহান্নাম!) তা তো হচ্ছে অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান!
সে দল দুটোর মধ্যে তোমাদের জন্য (শিক্ষণীয়) কিছু নিদর্শন (মজুদ) ছিল, যারা (বদরের) সম্মুখসমরে একে-অপরের সামনাসামনি হয়েছিল; (এদের মধ্যে) এক বাহিনী লড়ছিল আল্লাহর (দ্বীনের) পথে, আর অপর বাহিনীটি ছিল (অবিশ্বাসী) কাফেরদের, (এ সম্মুখ সমরে) তারা চর্মচক্ষু দিয়ে তাদের (প্রতিপক্ষকে) দ্বিগুণ দেখতে পাচ্ছিল, (তারপরও) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে সাহায্য (ও বিজয়) দান করেন; এ (সব ঘটনার) মাঝে সেসব লোকের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে যারা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন।
(আলে-ইমরান : ১২-১৩)
দুনিয়ার ধনসম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, যশ-খ্যাতি, প্রভাব- প্রতিপত্তি অর্জনের প্রবল প্রতিযোগিতায় ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে মানুষ ডুবে যায় পাপের পঙ্কিলতায়। আল্লাহ জাল্লা শানুহু দয়াপরবশ হয়ে কুরআন মাজিদে তাঁর অস্থির বান্দাদের অবস্থা উল্লেখ করে স্বস্তির পথ দেখান।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, নারীজাতির প্রতি ভালোবাসা, সন্তান-সন্ততি, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা-রুপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও জমিনের ফসল (সবসময়ই) মানব সন্তানের জন্য লোভনীয় করে রাখা হয়েছে; (অথচ) এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী (মাত্র! স্থায়ী জীবনের) উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে।
(হে নবী) তুমি (তাদের) বলো, আমি কি তোমাদের এগুলোর চেয়ে উত্তম কোনো বস্তুর কথা বলব? (হ্যাঁ, সে উৎকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে তাদের জন্য,) যারা আল্লাহকে ভয় করে; এমন লোকদের জন্য তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পূত পবিত্র সঙ্গী ও সঙ্গিনীরা (সর্বোপরি) থাকবে আল্লাহ তায়ালার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (আলে-ইমরান : ১৪-১৫)
ঈমানের দৌলত মুমিনের এক বিশাল প্রাপ্তি। দুনিয়ার মাঝে জটিল-কুটিল ও কণ্টকাকীর্ণ কঠিন বিবরে মহীয়ান-গরিয়ান প্রতিপালক দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেদায়াতের আলোকবর্তিক জ্বেলে মুমিনদের সুপথ দেখান। তাইতো আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শুকরিয়া আদায় করতে মাথা নত করে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, (স্মরণ করাে,) যখন তোমাদের মালিক ঘোষণা দিলেন, যদি তােমরা (আমার অনুগ্রহের) শােকর আদায় করো তাহলে আমি অবশ্যই তােমাদের জন্য (এ অনুগ্রহ) আরাে বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তােমরা (একে) অস্বীকার করো (তাহলে জেনে রেখো), আমার আজাব বড়ই কঠিন। (সূরা ইব্রাহিম-৭)
দুনিয়ার জীবনের পথপরিক্রমা সবসময় কুসুমাস্তীর্ণ হয় না; বিভিন্ন ধরনের অভাব-অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। তাই কোনো অবস্থাতেই মুমিনদের হতাশ হওয়া যাবে না এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পেরেশান না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা করতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘তোমরা কি ভেবেছো যে, বেহেশতে চলে যাবে, অথচ এখনো তোমাদের ওপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো দুঃখ-দুর্দশা এলো না? তাদের ওপরে তো এত দুঃখ-কষ্ট ও জুলুম-নির্যাতন এসেছে যে, তারা প্রকম্পিত হয়েছে, এমনকি রাসূল ও তাঁর সহযোগী মুমিনরা বলে উঠেছে যে, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে! হ্যাঁ, শুনে রাখো, সাহায্য আসন্ন!’ (সূরা বাকারাহ-২১৪)
মহা জ্ঞানী মহান প্রতিপালক দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবিশ্বাসীদের সাবধান করে দিয়েছেন, তারা যেন বাতিল পথ ও মত থেকে ফিরে আসে। নচেৎ দুনিয়ার জীবনের পথপরিক্রমা হবে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও অপমানকর এবং আখেরাতে জ্বলতে হবে ভয়ঙ্কর আগুনের লেলিহান শিখায়। অতএব তারা যেন ফিরে আসে ও সতর্কতা অবলম্বন করে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে সেসব (বিদ্রোহী) কাফেরদের তুমি বলে দাও, অচিরেই তোমরা (এ দুনিয়ায় লাঞ্ছিত) পরাজিত হবে এবং (পরকালে) তোমাদের জাহান্নামের (আগুনের) কাছে জড়ো করা হবে; (আর জাহান্নাম!) তা তো হচ্ছে অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান!(আলে-ইমরান : ১২)
রাহমানির রাহিম আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে কী অপূর্ব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন!
তারা কি আল্লাহর (দেয়া জীবন) ব্যবস্থার বদলে অন্য কোনো বিধানের সন্ধান করছে? অথচ আসমান জমিনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক, আল্লাহ তায়ালার (বিধানের) সামনে আত্মসমর্পণ করে আছে এবং প্রত্যেককে তো তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (আলে-ইমরান : ৮৩)
যারা সীমা লঙ্ঘন করে তাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড় দিতে দিতে একপর্যায়ে পাকড়াও করে ভয়াবহ শাস্তির অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। কারণ তারা অবিশ্বাসী ও অস্বীকারকারী। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, এসব (সীমালঙ্ঘনজনিত) কার্যকলাপের একমাত্র প্রতিদান হিসেবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা, তাঁর ফেরেশতা ও অন্য সব মানুষের অভিশাপ (বর্ষিত হবে)।
(সে অভিশপ্ত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম,) সেখানে তারা অনাদিকাল ধরে পড়ে থাকবে, (এক মুহূর্তের জন্যও) তাদের ওপর শাস্তির মাত্রা কমানো হবে না, না আজাব থেকে তাদের (একটুখানি) বিরাম দেয়া হবে!
(তবে) তাদের কথা আলাদা, যারা (এসব কিছুর পর) তাওবাহ করেছে এবং (তারপর) নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আলে-ইমরান : ৮৭-৮৯)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক