সদ্য সমাপ্ত কোরবানীর ঈদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টার পরামর্শে কুরবানীর চামড়া লবনজাত করে ক্ষতিগ্রস্থ কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা আজ ১লা সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল দশটায় রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ মাদরাসার দায়িত্বশীলদের প্রধান প্রতিনিধি ও যাদুরচর মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমীর সভাপতিত্বে এবং মুফতি ফজলুল করীম কাসেমী ও মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড-বেফাকের সহসভাপতি প্রবীণ আলেমেদ্বীন আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর)।
আলোচনা করেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, হাজীপাড়া মাদরাসা নারায়ণগঞ্জের মুহতামিম মুফতি আব্দুল আউয়াল, জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন সাভারের মুহতামিম মাওলানা আশিকুর রহমান কাসেমী, আফতাবনগর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, টঙ্গী দারুল উলূমের মুহতামিম মুফতি মাসউদুল করীম, মেরাজনগর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রশিদ আহমাদ, মুফতি সাঈদ নূর (পীর সাহেব মানিকগঞ্জ), জামিয়াতু ইব্রাহীম আ. ঝাউচরের মুহতামিম মুফতি জাহিদুল ইসলাম কাসেমী, দিলুরোড মাদরাসার মুহতামিম মুফতি সালাহ উদ্দিন, জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গীরচরের শিক্ষক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, জামিয়াতুস সুফফাহ আমীনবাজারের মুহতামিম মুফতি আব্দুল বারী, মুফতি মাহবুবুর রহমান নবাবগঞ্জী, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব, মাওলানা হারুনুর রশিদ, মাওলানা আনওয়ার হামিদী, মাওলানা আব্দুল জলিল, মুফতি মাহমুদ হাসান হাবিবী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব মধুপুর বলেন, চামড়া-শিল্প এদেশের সম্ভাবনাময় প্রধান শিল্পগুলোর একটি। এটি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেরও অন্যতম প্রধান খাত। এই খাতের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়-উপার্জন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় বাণিজ্য উপদেষ্টার আহবানে সাড়া দিয়ে সদ্য সমাপ্ত কোরবানীর ঈদে বিপুল সংখ্যক কওমী মাদরাসা চামড়া লবনজাত করে। ছাত্র উস্তাদদের অবর্ণনীয় কষ্ট ও পরিশ্রম সরকারের উদাসীনতা ও দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের কারণে বিনষ্ট হয়ে গেছে। কোরবানীর লবনজাত চামড়া নায্যমূল্যে বিক্রির কোন পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেনি। তারা আলেম উলামা ও মাদরাসাগুলোর সাথে একপ্রকার প্রতারণা করেছেন।
তিনি সরকারের কাছে তিন দফা দাবি উত্থাপন করে বলেন, অবিলম্বে কমিশন গঠন করে ক্ষতিগ্রস্থ মাদরাসা ও এতিমখানাগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাদের অসতর্কতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় ঘটেছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট খাতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আগামী একমাসের মধ্যে উক্ত দাবি পূরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্তনাদ সরকারের কানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরাতে ১১ জুন ২৫ইং তারিখে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি বছর ঈদুল আযহায় মোট ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। তন্মধ্যে গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি। ৯ জুন ২৫ইং গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগের মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো পৌনে ৮ লাখ চামড়া লবনজাত করেছে। যদিও বাস্তবে এর পরিমাণ অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো সরকারি ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্রয়কৃত লবন দিয়ে প্রায় ৩২ লাখ চামড়া লবনজাত করেছেন। লবনজাত পরবর্তী নায্যমূল্য না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলোর আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ আড়াইশো কোটি টাকার উপরে।
মতবিনিময় সভায় কোরবানীর চামড়া লবনজাত করে ক্ষতিগ্রস্থ মাদরাসার পক্ষ থেকে সরকারের সাথে আলোচনা করার জন্য পীর সাহেব মধুপুরকে প্রধান উপদেষ্টা ও হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমীকে আহ্বায়ক করে এগারো সদস্য বিশিষ্ট লিয়াঁজো কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মুফতি আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ, মুফতি মোহাম্মাদ আলী আফতাবনগর, মাওলানা আশিকুর রহমান কাসেমী, মুফতি মাসউদুল করীম, মাওলানা রশিদ আহমাদ মেরাজনগর, মুফতি ফজলুল করীম কাসেমী, মুফতি সাঈদ নূর, মুফতি সালাহ উদ্দিন ও মাওলানা হারুনুর রশিদ। দোয়ার মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শেষ হয়।