- হাসান আল মাহমুদ
ইসলামে কোরবানি একটি মহান ইবাদত। কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগের মহান শিক্ষার অনুসরণ করে থাকে। তবে কোরবানি কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো—শরিয়তের নির্ধারিত নিয়ম মেনে কোরবানির পশু নির্বাচন করা। অনেক সময় অজ্ঞতা, অবহেলা বা হেলাফেলার কারণে এমন পশু কোরবানি করা হয়, যেগুলো শরিয়তসম্মত নয়। এতে যেমন কোরবানির উদ্দেশ্য বিফল হয়, তেমনি ইবাদতেও ঘাটতি থেকে যায়। তাই কোরবানির পশু নির্বাচনের সময় কিছু বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখা জরুরি।
১. অসুস্থ ও দুর্বল পশু কেনা
অনেক সময় কম দাম বা অসচেতনতার কারণে হাড় জিরজিরে, দুর্বল কিংবা অসুস্থ পশু কিনে কোরবানি করা হয়। অথচ শরিয়ত বলছে, এমন পশু যা কোরবানির জায়গা পর্যন্ত হাঁটতে পারে না, চোখে প্রায় কিছুই দেখতে পায় না বা অতিরিক্ত দুর্বল, সেগুলো দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। ( সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ২৮০২)
২. বয়সের শর্ত উপেক্ষা করা
প্রত্যেক প্রকার কোরবানির পশুর জন্য শরিয়তে নির্ধারিত বয়স রয়েছে। যেমন: গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছর, উট পাঁচ বছর এবং ছাগল ও ভেড়া এক বছর বয়সী হতে হবে। তবে ছয় মাসের ভেড়া বা দুম্বা যদি এক বছরের মতো সুস্থ ও মোটা হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য। ( সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৬৩)
৩. অঙ্গহানি বা অক্ষম পশু নির্বাচন
যেসব পশুর শরীরে বড় ধরণের অঙ্গহানি রয়েছে, যেমন—শিং গোড়া থেকে ভেঙে গিয়ে মগজ পর্যন্ত ক্ষত পৌঁছানো, দাঁতের অর্ধেক বা বেশি পড়ে যাওয়া, পা নষ্ট হয়ে চলাচলে অক্ষমতা, লেজের এক-তৃতীয়াংশ কাটা ইত্যাদি—এ ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড ৫; সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ২৮০৪)
৪. কান নেই বা ছোট কান রয়েছে এমন পশু নিয়ে বিভ্রান্তি
অনেকের ধারণা, পশুর কান ছোট হলে কোরবানি হয় না। অথচ শরিয়ত বলে, পশুর কান একেবারেই না থাকলে কোরবানি হবে না, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে ছোট কান থাকলে কোরবানি বৈধ। (বাদায়েউস সানায়ি, খণ্ড ৪)
৫. গর্ভবতী পশু কিনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়া
কোনো গাভী বা ছাগী গর্ভবতী হলে তা কোরবানি করা বৈধ। তবে জবাইয়ের পর যদি পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া যায়, তাকেও আলাদা করে আল্লাহর নামে জবাই করতে হয়। (আল-মুগনী – ইবনে কুদামা; সহীহ বুখারী)
৬. কোরবানির পশু হালালভাবে না কেনা
চুরি করা, আত্মসাত করা, জোর করে দখল করা বা অবৈধভাবে কেনা পশু দিয়ে কোরবানি করা সম্পূর্ণ হারাম। ( সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯৪০)
৭. পশুর শরীরের চেহারা দেখে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
কোনো পশু বাহ্যিকভাবে মোটা বা সুন্দর দেখালেই সে কোরবানির উপযুক্ত নয়। বয়স, স্বাস্থ্য, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চোখ, দাঁত, লেজ ইত্যাদি দেখে নিশ্চিত হয়ে তবেই পশু নির্বাচন করতে হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিকহ বিভাগ, কোরবানি নির্দেশিকা)
উপসংহার
কোরবানি হলো আত্মত্যাগ ও ইবাদতের এক অনন্য নিদর্শন। এটি কেবল পশু জবাই নয়; বরং আল্লাহর আদেশ মেনে ত্যাগের অনুশীলন। তাই কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের খুব সচেতন থাকা জরুরি। শরিয়তের নিয়ম-কানুন জানা এবং অনুসরণ করা আমাদের কোরবানিকে কবুল হওয়ার পথে সহায়ক করে তোলে। ভুল ও গাফিলতির কারণে যেন ইবাদতে ঘাটতি না হয়, সে জন্য প্রত্যেক মুসলমানকে কোরবানির পশু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।