গণঅভ্যুত্থানের অর্জন এখনো অনিশ্চিত: চরমোনাই পীর

জাতীয় নাগরিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ (বুধবার) বিকাল ৩টায় পুরানা পল্টনের আইএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই এ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলেও এতে ইতিহাসের প্রতি বৈষম্য, গণআকাঙ্ক্ষার উপেক্ষা এবং ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি সংস্কারের অগ্রগতি না থাকায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’

ঘোষণাপত্রে ইতিহাসের অপূর্ণতা ও বৈষম্যের অভিযোগ

চরমোনাই পীর অভিযোগ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে ৭১, ৭৫ ও ৯০ এর আন্দোলনের কথা থাকলেও ৪৭-এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং শাপলা চত্বর, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, আলেমদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ উপেক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “এভাবে ইতিহাসের একাংশ বাদ দিয়ে উপস্থাপন করাটা দুঃখজনক। এটি ইতিহাসের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।”

ফ্যাসিবাদের দোসরদের আড়াল করা হয়েছে

চরমোনাই পীর জানান, ঘোষণাপত্রে আওয়ামী শাসনামলের অপকর্মের কথা থাকলেও ফ্যাসিবাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দোসরদের কোনো উল্লেখ নেই। তাঁর ভাষায়, “এটি ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে।”

গণঅভ্যুত্থানের সার্বভৌমত্ব সংকটে

ইসলামী আন্দোলন মনে করে, ঘোষণাপত্রের ধারা ২৫ ও ২৭-এ সংস্কার ও সাংবিধানিক স্বীকৃতিকে পরবর্তী সরকারের হাতে ছেড়ে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মর্যাদা হ্রাস করা হয়েছে।

চরমোনাই পীর বলেন, “’উপযুক্ত সরকার’-এর ওপর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নির্ভর করছে—এটা গণঅভ্যুত্থানের বৈধতা ও সার্বভৌমত্বকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।”

জুলাই সনদ নিয়ে আইনি ভিত্তি চান চরমোনাই পীর

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে জানানো হলেও, চরমোনাই পীর মনে করেন এখনো পর্যন্ত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি গড়ে না তোলা এবং সংস্কারের রূপরেখা না থাকা জাতিকে অনিশ্চয়তায় রেখেছে।

তিনি বলেন, “অধ্যাদেশ জারি বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে তবেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।”

পিআর পদ্ধতির উপেক্ষায় গভীর হতাশা

ইসলামী আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরেই পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির দাবিতে সোচ্চার। অভ্যুত্থানের পর এ বিষয়ে জনমত ও রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হলেও, নিম্নকক্ষে এজেন্ডায় তা স্থান না পাওয়ায় দলের নেতারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চরমোনাই পীর বলেন, “এটা জনগণের দাবিকে অবজ্ঞা করার সামিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আহবান জানাই—পিআর নিয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই যেন কোনো তফসিল ঘোষণা না করা হয়।”

উচ্চকক্ষের ক্ষমতা ও ভোটপদ্ধতি নিয়েও অস্পষ্টতা

তিনি আরও বলেন, “উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেও, ভোট গ্রহণের পদ্ধতি এবং ক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। নির্বাচনের আগে এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরি।”

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হয় এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হয়, তাহলে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কঠিন হবে।”

তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান, ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের অবশিষ্টাংশ দ্রুত অপসারণ করে একটি নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে।

বিচার ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে অসন্তোষ

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ফ্যাসিস্টদের বিচারের বিষয়টি থাকলেও, ইসলামী আন্দোলন মনে করে সেটির গতি এবং ব্যাপকতা যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, “বিচার কার্যক্রম আরও দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমস্যাও এখনও সমাধান হয়নি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও আশাজাগানিয়া কিছু দেখা যাচ্ছে না।”

ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনমুখী দল, প্রস্তুতি চলছে

সংবাদ সম্মেলনের শেষে চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতিও চলছে। আমরা চাই, সরকার জনগণের চাওয়া-মতামত ও আমাদের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করবে।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, পিআর নিয়ে যৌক্তিক সমাধান আসবে এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। তবেই গণঅভ্যুত্থান হবে সত্যিকার অর্থে সফল।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বান্দরবানে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ৪

নূর নিউজ

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন

নূর নিউজ

ঐকমত্য কমিশনের সাথে ইসলামী আন্দোলনের সংলাপ আগামীকাল

আনসারুল হক