ভেবেছিলাম এবং আশাবাদীও ছিলাম—জুলাই ঘোষনাপত্র হবে একটি সর্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাহসী রাজনৈতিক দলিল। কিন্তু গভীর দুঃখ ও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে হলো—ঘোষণাপত্রে শাপলা চত্বরের ঐতিহাসিক আন্দোলনকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।
২০১৩ সালের সেই রাতের কথা জাতি ভুলে যায়নি। মাদরাসার নিরীহ ছাত্ররা শহিদ করা হয়েছিল, নামাজরত ও জিকিররত মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। সাজানো মামলায় কারারুদ্ধ করা হয়েছিল ততকালীন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ., মুফতী ওয়াক্কাস রহ., মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজীসহ অসংখ্য আলেমকে। এটিই ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রথম বড় প্রতিরোধ। এই রক্তগঙ্গার স্রোত ধরেই প্রস্তুত হয় ২০২৪-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাটি।
আজ প্রশ্ন উঠেছে, আলেমদের সেই আত্মত্যাগকে স্বীকার না করে কি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব? এই ঘোষণাপত্র কি সত্যিই জাতীয় দলীল?
বিগত দশকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শাপলার শহিদদের স্মরণে সভা-সেমিনার করেছে, হ’ত্যার বিচার চেয়েছে। অথচ আজ যখন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র লেখা হলো, তখন সেই সংগ্রামের চিহ্নটুকুও রাখা হলো না। এটা কী ভুল, না সচেতনভাবে ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা? নাকি নেতৃত্বে আলেমরা থাকায় সুশীলদের খুশি রাখতে লুকোচুরি খেলা?
শুধু শাপলা নয়, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনেও অসংখ্য আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্র জীবন দিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের অন্যতম নিয়ামক শক্তি। তারা মাঠে না থাকলে আজকের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ এতো সহজে তৈরি হতো না। তাঁদের ভূমিকা বাদ দিয়ে লেখা যে কোনো ইতিহাস হবে অপূর্ণ, একচোখা এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক ও নৈতিকভাবে দেউলিয়াপূর্ণ।
মনে রাখবেন, শহিদদের রক্ত শুধু আবেগ নয়—এটি আমাদের ভবিষ্যতের দায়। তাদের অবদানকে ন্যূনতম সম্মান না দিলে, ইতিহাস একদিন এর বিচার করবে।
স্পষ্ট ভাষায় বলছি, এই অসম্পূর্ণ ঘোষণা পত্র আমরা মানি না। আলেমদের অবদানকে সন্নিবেশিত করে দ্রুত সংশোধিত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। নইলে এই ঘোষণাপত্র ধুয়ে আপনারা পানি খান। ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাই বিকল্প ঘোষণাপত্র দেবো—ইনশাআল্লাহ।
–আনছারুল হক ইমরান
সম্পাদক, নূর নিউজ ২৪