কারাবন্দিদের ন্যায় অধিকার প্রতিষ্ঠা, শাফিউর রহমান ফারাবী, ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক সাইমন, মাওলানা আমিরুল ইসলামসহ সকল ইসলামপন্থী মজলুমের মুক্তি এবং নতুন করে শুরু হওয়া ‘জঙ্গি নাটক’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে একই বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মীর ইদরীস নদভীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মুফতী শফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মুফতী জসিমউদ্দীন রাহমানী, আহমাদ রফিক, মুফতী ফখরুল ইসলাম, এডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার, মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবী, আসিফ আদনান, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের জয়েন সেক্রেটারি মাওলানা ইসহাক খান, মাওলানা আল আমীন সাকী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ইউসুফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আশিক আল আবিদ, মাওলানা ইসমাইল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের সেক্রেটারি মুফতী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা আবারও এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি, যেখানে ইসলামি চিন্তা, আদর্শ ও প্রতিবাদকে অপরাধ হিসেবে দেখানোর ষড়যন্ত্র নতুন করে শুরু হয়েছে। অতীতে শেখ হাসিনার আমলে যেভাবে আলেম, ছাত্র ও ইসলামি লেখকদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, আজও সেই একই স্ক্রিপ্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এক বছর আগে শেখ হাসিনার পতন হলেও তাঁর রেখে যাওয়া ইসলামবিদ্বেষী নীতির ছায়া এখনো বর্তমান। প্রমাণ, আজও শাফিউর রহমান ফারাবী, ইঞ্জিনিয়ার সাইমন, মাওলানা আমিরুল ইসলামসহ বহু ধর্মপ্রাণ ও মানবিক মানুষ মিথ্যা মামলায় বন্দি রয়েছেন।”
মুফতী শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ইসলামি আদর্শের বিরুদ্ধে আবারও ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানো হচ্ছে। মুফতি রেজাউল করীম আবরার, লেখক আসিফ আদনান ও আলোচক জাকারিয়া মাসউদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করে নতুন করে সেই ষড়যন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই প্রপাগান্ডার উদ্দেশ্য একটাই, ইসলামকে ভয় দেখানো, মুসলমানদের ভাবমূর্তি কলুষিত করা এবং চিন্তাশীল ধর্মপ্রাণ তরুণদের নির্মূল করে দেওয়া।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও বহু কারাগারে আজও স্থায়ী মসজিদ নেই। জামাআতের ব্যবস্থা নেই, কুরআন শিক্ষার সুযোগ নেই, ইসলামিক কাউন্সেলিং নেই। এমনকি অনেক বন্দিকে নামাজ বা কুরআন পড়তেও বাধা দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “কারাবন্দি মুসলমানরা বছরের পর বছর তাঁদের স্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান না। এতে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়, সন্তানরা বিপথে যায়। এটি শুধু শরিয়তের নয়, মানবিকতারও লঙ্ঘন।”
মুফতী শফিকুল বলেন, “আদালত জামিন দিলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনিক জটিলতায় অনেক মজলুম মুক্তি পাচ্ছেন না। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ।”
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন সভাপতি মাওলানা মীর ইদরীস নদভী:
১. শাফিউর রহমান ফারাবী, সাইমন, আমিরুল ইসলামসহ সকল ইসলামপন্থী মজলুম বন্দির মুক্তি দিতে হবে।
২. সকল কারাগারে স্থায়ী মসজিদ নির্মাণ ও ইবাদতের পূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বন্দিদের মাসে অন্তত দুইবার তাঁদের স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।
৪. কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ২০ বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্তদের মানবিক বিবেচনায় মুক্তি ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. জামিনপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তিতে প্রশাসনিক বাধা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
৭. প্রতিটি কারাগারে ধর্মীয় শিক্ষা, আলেম নিয়োগ ও ইসলামিক কাউন্সেলিং চালু করতে হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “নতুন করে শুরু হওয়া এই ‘জঙ্গি নাটক’ ও ইসলামবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মজলুমদের মুক্তি কেবল একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি একটি ঈমানি ও মানবিক দায়িত্ব। এখনই প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময়।”