জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রধান রক্ষাকবচ হলো নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই আজ ১২ জুলাই, শনিবার “অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি” বিষয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতির বক্তব্যে বলেন,আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি এবং অসুস্থ রাজনীতির কারণে। জুলাই অভ্যুত্থানকেও আমরা অতীতের মতো ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আহতরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।

তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে।

আরেকটা কথা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোন বিকল্প নাই। গত ২৮ জুলাইয়ের জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির পক্ষে গণপ্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর জুলাই আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আশংকা প্রকাশ করে বলেন,জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা নিশ্চিত ও টেকসই করার একমাত্র রক্ষাকবচ হলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী সরকারকে বাধ্য করার জন্য পিআর-ই একমাত্র উপায়। এর বাইরে নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌছানো যাচ্ছে না। আবার জুলাই সনদের আইনী মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাঁপে পড়ে সংস্কারে রাজী হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার বহাল রাখবে কিনা সেই অনিশ্চয়তা এখনই দেখা দিয়েছে।

২০০৮ সালে ৪৯% ভোট পাওয়া সত্যেও সংসদে দুই তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করার একক কর্তৃত্ব পাওয়ার নজীর আমাদের দেশে আছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির সম্ভাবনা আছে। তাই যদি হয় তাহলে সংস্কারের সকল চেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। তখন একক দলের সিদ্ধান্তে “আইন সম্মত” ভাবেই আমাদের সংস্কার চিন্তার মৃত্যু ঘটবে। অধিকাংশ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে সংস্কার চিন্তাকে হত্যার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার মতো “আইনী বৈধতা” এনে দিতে পারে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পিআরকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম উপায় আখ্যায়িত করে বলেন,বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তায় সামান্য পরিবর্তনের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। বাংলাদের নির্বাচন থেকেই দৃষ্টান্ত দেখা যাক। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ৪০% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে মাত্র ২১%। আবার ২০০৮ সালে ৪৯% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ৭৭%। অর্থাৎ মাত্র ৯% ভোট বেশি পাওয়ায় আসন বেড়েছে ৫৬%, মানে ৬ গুনের বেশি।

বিএনপির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ২০০১ এ ৪৭% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ৬৮% আর ২০০৮ সালে ৩৩% ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ১০%। ১৪% ভোট হ্রাস পাওয়ায় তার আসন হ্রাস পেয়েছে ৫৪%। ভোটের সামান্য ব্যবধানে আসনের এমন বড় উত্থান-পতনের কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারসাম্যহীন হয়। অল্পতেই কোন দল বিপর্যস্ত হয় আবার কোন দল সীমাহীন ক্ষমতা পেয়ে যায়। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা এভাবেই রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

এই দুই নির্বাচনে যদি পিআর পদ্ধতি থাকতো তাহলে চিন্তা করে দেখেন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হতো? সম্ভবত ২০২৪ এ আমাদের এতো রক্ত দেয়ার মতো অবস্থাই তৈরি হতো না।

পীর সাহেব চরমোনাই পিআরকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কার্যকর কৌশল অভিহিত করে বলেন,বাংলাদেশের রাজনীতি হলো পরস্পর বিনাশী। এই বিধ্বংশী রাজনীতির প্রতিফল আমরা ভোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে যেহেতু সংসদে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি জোড়ালো থাকে এবং সরকার গঠনে যে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সেজন্য দলগুলোকে বাধ্য হয়েই অন্যদলের সাথে সহ-অবস্থান ও সহনশীল অবস্থান ধরে রাখতে হয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্য এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর পিআরকে নির্বাচনী কারচুপি রোধের উপায় হিসেবে উপস্থাপন করে বলেন,পিআর পদ্ধতিতে ভোটের অনুপাতের সামান্য পরিবর্তনে বড় কোন পরিবর্তন আসে না। বড় পরিবর্তন করতে বড় ধরণের কারচুপির প্রয়োজন হয়। ছোট কারচুপি যত সহজে করা যায় বড় কারচুপি তত সহজে করা যায় না বলে সামগ্রিক কারচুপির প্রবণতাই কমে যায়। আবার বিদ্যমান পদ্ধতিতে স্থানীয় ফলাফলের ওপরে এলাকার প্রার্থীর ভাগ্য নির্ভর করে। এমপি হওয়ার তাকিদে প্রার্থীরা ভোট ডাকতির চুড়ান্ত করে। কিন্তু পিআরে যেহেতু স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ভাগ্য জড়িত থাকে না তাই তারা বেশি ভোট পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে না।
ফলে নির্বাচনে কারচুপির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, পিআরের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের গুনগত মান বৃদ্ধি পাবে, সংসদ জাতীয় ইস্যুতে বেশি মনোযোগী হবে,স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং রাজনৈতিক জোট-সমঝোতা হবে আদর্শভিত্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ।

পীর সাহেব চরমোনাই পিআর বিষয়ে উত্থাপিত কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেন,পিআর নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ভৌগলিক প্রতিনিধিত্বের অনিশ্চয়তার বিষয়টি সামনে আসে। এখানে লক্ষণীয় হলো, প্রথমত সাংসদদের কাজ এলাকার উন্নয়ন করা না। বরং পলিসি লেভেলে কাজ করা। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী কাজ করা।

যদি তারা বৈষম্যহীন নীতি গ্রহন করতে পারেন তাহলে দেশের সর্বত্র উন্নয়ন পৌছে যাবে। আর এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিগণ তো দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন-ই।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ একটি এককধারার দেশ। স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি মূখ্য হয় যখন দেশে ভাষা, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতি ও ধর্মের নানা বিভাজন থাকে তখন। ফলে পলিসি লেভেলে ভৌগলিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন এখানে মূখ্য না।

তৃতীয়ত, পিআর পদ্ধতিতেও ভৌগলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। তুরস্কের মডেলে আমাদের এখানে বিভাগভিত্তিক পিআর করলেই এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

‘সারা বিশ্ব যখন উন্নয়ন দেখে তখন দেশের কিছু অন্ধ তা দেখে না’

নূর নিউজ

মুরাদনগরে মুফতী আমিনী রহ.-এর ‘জীবন ও কর্ম ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নূর নিউজ

৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বাতিল, পালিত হবে যেসব দিবস

আনসারুল হক