ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নির্বাচন চায় অন্তর্বর্তী সরকার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অল্প সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে, আর আরেকটু বেশি সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নভেম্বর–ডিসেম্বরের (২০২৫) মধ্যেই নির্বাচনের কথা বলেছিলেন।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি যদি খুব ভুল না করে থাকি তাহলে অক্টোবরের দিকে তফসিল ঘোষণা, ডিসেম্বরে নির্বাচন এবং জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার গঠন হতে পারে- এমন সংকেত পাচ্ছি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংস্কারে জোর দিলেও বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বেশ কিছু বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা রয়েছে। এমতাবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার না এলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা রয়েছে। যদিও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন প্রশ্নে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের মতবিরোধ আছে। তবে জামায়াত ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই দাবির বিরোধিতা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ জন্য ১১টি সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের’ আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশের সারসংক্ষেপ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। মূলত দুটি বিষয় মাথায় রেখে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রথমত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধিও আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে বেশির ভাগ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় জনপ্রতিনিধি না থাকায় সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে নতুন নির্বাচন কমিশনের একটি পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা হবে। সরকারও সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। নির্বাচনী যেসব সংস্কার আনা হবে, সেগুলো কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটাও এর মাধ্যমে বোঝা সম্ভব হবে।

তবে বিএনপি মনে করে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে সারা দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আগে স্থানীয় নির্বাচন চাওয়াকে দেশকে ভঙ্গুর করার পরিকল্পনা হিসেবে বর্ণনা করেছে বিএনপি।

অবশ্য সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে ইসি জানিয়েছে, তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত ইসিকে জানানো হয়নি। ইসি অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধানে্তর দিকে তাকিয়ে আছে। জেলা প্রশাসকদের এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। জনপ্রশাসনেও পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। নির্বাচনের মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগে পুলিশ ও প্রশাসনকে পুরোপুরি কার্যকর ও গতিশীল করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। পুলিশ এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে নির্বাচনের সময় কতটা শক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। যদিও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাই আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৫০৯ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই কোটি ৭৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার। এজন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। অতিরিক্ত সচিব জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবির জন্য সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৮৪ টাকা ৮৪ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ২০৩ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তিনি জানান, সুং শিং এডিবল অয়েলের কাছ থেকে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। এক্ষেত্রে প্রতি লিটারের দাম ধরা হয়েছে ১৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাঈদ মাহবুব খান জানান, এছাড়া সুপার ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৮৫ টাকা ৯৫ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ২০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

নূর নিউজ

শীতের আমেজ না কাটতেই ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি

আনসারুল হক

সবার মধ্যে আরও কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

আনসারুল হক