হাসান আল মাহমুদ
আজ ৯ জিলহজ, পবিত্র হজের গুরুত্বপূর্ণ দিন—আরাফার দিন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের বিস্তীর্ণ ময়দানে অবস্থান করবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো মুসল্লি। সেলাইবিহীন সাদা ইহরামে তারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত থেকে উচ্চারণ করবেন—
“লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লা শারীকা লাকা লাব্বায়েক…”
এই তাকবির ও তালবিয়ার ধ্বনিতে আজ মুখর হয়ে উঠবে আরাফাতের পবিত্র প্রান্তর।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে। যদিও আনুষ্ঠানিক সূচনা বুধবার সকাল থেকে, বেশিরভাগ হজযাত্রী আগের রাতেই মিনার তাঁবুতে পৌঁছে যান। সৌদি আরবের স্থানীয় হজসেবা কর্মীরা (মুয়াল্লিম) মঙ্গলবার রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় স্থানান্তর শুরু করেন।
এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও ৮৫ হাজার ১৬৪ জন মুসল্লি হজ পালন করছেন। মিনায় বাংলাদেশি হাজিদের সেবায় কাজ করছে ১৮টি টিম। মিনার তাঁবুগুলো ‘লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে, যেখানে মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগি, জিকির ও তালবিয়ায় দিন-রাত কাটান। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং রাতযাপন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
আজ ভোরে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যাত্রা শুরু করেন হজযাত্রীরা। যানজট ও ভিড় এড়াতে অনেককে আগের রাতেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফাতই হজের মূল কেন্দ্রবিন্দু, যাকে বলা হয় ‘হজের দিন’। এই বিশাল সমতল প্রান্তরে অবস্থিত জাবালে রহমত বা ‘রহমতের পাহাড়’-এর পাশেই দাঁড়িয়ে ১৪শ বছর আগে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)।
যাদের শরীরিক অবস্থা দুর্বল বা অসুস্থ, তাদেরও আজ অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতে নিয়ে যাওয়া হবে, কেননা আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজ পরিপূর্ণ হয় না।
এ বছর মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা প্রদান করবেন মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ হুমাইদ। এ খুতবা বাংলা ছাড়াও আরও ২০টি ভাষায় অনূদিত হবে। বাংলায় অনুবাদ করবেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী—ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব।
চলমান প্রচণ্ড গরমের কারণে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ হাজিদের সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁবুতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন। তাপজনিত রোগ প্রতিরোধে এবারে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাহ আসির জানিয়েছেন, এবারে হজের জন্য ৫০ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক জনবল নিয়োজিত রয়েছে। গরমজনিত অসুস্থতায় তাৎক্ষণিক সেবা দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০০টির বেশি হাসপাতালের শয্যা। চিকিৎসা সক্ষমতাও আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।