পহেলা এপ্রিল মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বেদনাবহ দিন

হাফেজ আবুল মঞ্জুর: পহেলা এপ্রিল বা এপ্রিলের প্রথম তারিখ, মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বেদনাদায়ক দিন। এই দিনে প্রভাত হওয়ার সাথে সাথে “April Fool” পালনের নামে একে অপরকে ধোকা দেওয়া আর ঠকানোর অভিনব খেলার মাধ্যমে উল্লাস করতে দেখা যায় কতিপয় শিশু- কিশোর-যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে। যেমন- ছোট ছেলে মেয়েরা লজেন্স এর মোড়কে মাটির টুকরো ভর্তি করে তার কোন বন্ধুকে দিল। সে যখন খাওয়ার জন্য মোড়কটি খুলল দেখা গেল সেখানে লজেন্স নেই, রয়েছে মাটি। তখন ওই ছোট বাচ্চারা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, এপ্রিল ফুল! এপ্রিল ফুল! অর্থাৎ হায়, এপ্রিল বোকা !

অথচ কাউকে ধোকা দেওয়া বা প্রতারিত করার পরিণাম সম্পর্কে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যারা প্রতারণা করে তারা আমার উম্মত নয়’। রাসূল (স.) এর এমন হুশিয়ারি সত্ত্বেও মানুষকে অভিনব পন্থায় প্রতারিত করে বোকা বানানোর মাধ্যমে যে সব মুসলিম ভাইয়েরা বিজাতীয় সংস্কৃতি এপ্রিল ফুল পালনে মেতে উঠেন তারা কি জানেন, এই এপ্রিল ফুলের প্রেক্ষাপট মুসলমানদের জন্য আনন্দের না বেদনার ? পহেলা এপ্রিল মুসলমানদের জন্য উল্লাসের দিন নাকি শোকাবহ অধ্যায় ? এই দিনটি যে মুসলমানদের জন্য কত হৃদয় বিদারক ও করুণ তা ভাবতেও দেহ, মন শিউরে উঠে। এবিষয়ে সঠিক ইতিহাস জানা থাকলে কখনও এমন আত্মঘাতী সংস্কৃতি কোন প্রকৃত মুসলমানরা পালন করবে না।

এপ্রিল ফুলের প্রেক্ষাপট :
এপ্রিল ইংরেজী বর্ষের চতুর্থ মাস। ফুল অর্থঃ বোকা। সুতরাং এপ্রিল ফুলের সমন্বিত অর্থ দাঁড়ায় এপ্রিলের বোকা। এই দিনে লক্ষ লক্ষ মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে শহীদ করেছিল খৃষ্টানেরা। তাই খৃষ্টান সম্প্রদায় এই দিনে এপ্রিল ফুল (এপ্রিলের বোকা) দিবস পালন করে। পহেলা এপ্রিল খৃষ্টানদের নিকট অতি আনন্দ ও উৎসবের দিন। আর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য বেদনাদায়ক, রক্তস্নাত ও শোকাবহ ইতিহাস সৃষ্টির দিন। কারণ এর পিছনে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষে পরিচালিত খৃষ্টানদের পাতানো ষড়যন্ত্রের সুদীর্ঘ ইতিহাস।
৯৮ হিজরী মোতাবেক ৭১১ খৃষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ (রা.) মাত্র সাত হাজার সন্য নিয়ে স্পেন জয় করেন। এরপর সুদীর্ঘকাল যাবত সগৌরবে স্পেন শাসন করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শাসকদের অনৈক্যের সুযোগকে পুঁজি করে গৌরব গাঁথা মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে খৃষ্টানশক্তি মাথাচড়া দিয়ে উঠে। স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে খৃষ্ট জগত।
এরই প্রেক্ষিতে কুট-কৌশলের মাধ্যমে পর্তুগিজের রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী সম্রাট ফার্ডিন্যান্ডকে বিয়ে করে। এরপর তাদের নেতৃত্বে মুসলিম নিধন যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলমানদের অসতর্কতার সুযোগে খৃষ্টান বাহিনী মুসলমানদের এভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলে যে, একমাত্র মহাসমুদ্র ছাড়া মুসলমানদের যাওয়ার জন্য বিকল্প কোন পথ ছিলনা। অন্যান্য খৃষ্টান রাজারাও এ যুদ্ধের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। আর এতে খৃষ্টানদের মদদ যোগিয়ে ছিল কিছু মুনাফিক। যারা মুসলমানদের গলায় ছুরি লাগিয়ে নির্মাণ করতে চেয়েছিল ক্ষমতা ও স্বার্থের নীড়। তারা বিষের পেয়ালায় মুখ লাগিয়ে পেতে চেয়েছিল মধুর স্বাদ। এ সুযোগে যখন খৃষ্টানরা যমদূতের ভূমিকায় অবর্তীণ হল তখন মুসলিম বাহিনী দৃঢ় মনোবল নিয়ে রুখে দাড়ায় খৃষ্টান বাহিনীকে। মুসলমানদের রণপ্রস্তুতি দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সম্মিলিত খৃষ্টান বাহিনী। বাইরে দাড়িয়ে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আল-হামরার মিনারের দিকে। কখনও সম্মুখ যুদ্ধে সফলতা লাভ করতে পারেনি বলে চালাক ফার্ডিন্যান্ড ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা শহরের প্রধান খাদ্য গুদামসহ আশপাশের সকল শস্যক্ষেত জ্বালিয়ে দেয়। ফলে দূর্ভিক্ষ প্রকট আকার ধারণ করে। তখন প্রতারক ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করে যে, যারা অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করবে তাদেরকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেয়া হবে। এ ঘোষণায় সরলপ্রাণ মুসলমানেরা যেন আশার আলোর সন্ধান পেল। সেদিন পহেলা এপ্রিল ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে খৃষ্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে স্পেনের রাজধানী কার্ডোভার মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে মুহুর্তের মধ্যে সমবেত হয়ে গেল লক্ষ লক্ষ দূর্ভিক্ষ তাড়িত মুসলমান আবাল, বৃদ্ধা-বনিতা আর নিষ্পাপ শিশুরা। কিন্তু ইতিহাসের নিকৃষ্টতম পিচাশ খৃষ্টান বাহিনী মুসলমানদের ভিতরে আটকে রেখে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রতিটি মসজিদে। এরপর হায়েনার চেয়েও হিংস্র ওই মানুষনামী পশুগুলো আগুন লাগিয়ে দেয় মসজিদগুলোতে। এভাবে মানবাধিকারের শ্লোগানধারী খৃষ্টান বাহিনী পদলিত করে বসল বিশ্ব মানবতাকে। ফলে মুহুর্তের মধ্যে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ আর্তচিৎকার করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় মসজিদের ভেতরে। এ জঘন্যতম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে সংযোজিত হল এক হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক অধ্যায়। রচিত হল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম ইতিহাস।
যেখানে আটশত বছর মুসলমানদের শাসন চলেছিলো সে স্পেনে মুসলমানদের উপর খৃষ্টানদের এমন নিষ্টুর হত্যাযজ্ঞের ফলে স্পেনের বুকে আজ ইসলাম বিপন্ন। বিশ্ববরেণ্য আলিম, বিচারপতি আল্লামা তকী উসমানী তাঁর ‘স্পেনের সফর নামা’য় লিখেছেন, আমি আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের বিমান বন্দরে নামাজ আদায় করেছি। কেউ আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে থাকেনি। কারণ তারা জানেন আমি যা করছি তা আল্লাহর ইবাদত নামাজ। কিন্তু যেই স্পেনের মাটিতে মুসলমানরা আটশত বছর শাসন করেছে, সেখানে যখন বিমান বন্দরে নামাজের সময় হলে, আমি নামাজে দাঁড়ালাম তখন সকল কর্মকর্তারাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। (ভাবটা যেন এ রকম) এ লোক এটা কি করছে। এটা যে আল্লাহর ইবাদত নামাজ তারা তাও বুঝছেনা। অথচ এই সেই স্পেন যেখানে প্রতিদিন পাঁচ বার মসজিদের মিনার হতে আযানের ধ্বনি ভেসে আসতো। যেখানে হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির জন্ম নিয়েছিলেন, যে দেশের মাটিতে ইমাম কুরতুবী (রহ.) রচনা করেছিলেন ৩০ খণ্ডের তাফসিরে কুরতুবী। সেই স্পেনে ইতিহাসের নির্মমতম বর্বরতা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলমানদের শহীদ করে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই ছিল এপ্রিলফুলের আসল প্রেক্ষাপট।

জ্বলন্ত অগ্নি শিখায় দগ্ধ অসহায় মুসলমানদের আহাজারীতে যখন গ্রানাডার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল তখন ঘাতক বেঈমান ফার্ডিন্যান্ড খুশিতে আত্মহারা হয়ে রাণী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে উপহাস করে বলতে থাকে, (April Fool) হায় ! এপ্রিলের বোকা। শত্রুর আশ্বাসে কি কেউ বিশ্বাস করে ? তার সেই উক্তি অনুসারে তখন থেকে খৃষ্টজগৎ প্রতি বছর মহাসমারোহে “এপ্রিল ফুল” তথা এপ্রিলের বোকা উৎসব পালন করে আসছে।
কিন্তু সম্প্রতি মুসলিম নিধনের সেই করুণ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস ভুলে গিয়ে কতিপয় মুসলমানদেরকেও নির্লজ্জ ভাবে খৃষ্টানদের সাথে তাল মিলিয়ে পহেলা এপ্রিলে একে অপরকে ধোকা দেয়ার মাধ্যমে ‘এপ্রিল ফুল’ পালনে উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেতে উঠতে দেখা যায়। যা আত্মহননের নামান্তর। এপ্রিল ফুলের মুলতত্ত্বে খোদাদ্রোহিতার চরম দৃষ্টান্ত আর মুসলিম নিধনের হৃদয় বিদারক ইতিহাস জানার পরও কি কোন মুসলমানদের পক্ষে এপ্রিল ফুল উৎসব পালন করা সম্ভব! না কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই আসুন পহেলা এপ্রিলকে উল্লাস নয়; শহীদদের মাগফিরাত কামনায় দু’আ দিবস হিসেবে পালন করি। অপসংস্কৃতি পরিহার করে প্রকৃত ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং এ কালের নব্য ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলারা মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে ইসলাম বিধ্বংসী যে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে তা রুখে দাঁড়াই।

লেখক:
খতীব,শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ, কক্সবাজার।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যেভাবে হজের স্বপ্ন পুরণ হলো বিখ্যাত খৃষ্টান ধর্মযাজক ইব্রাহিম রিচমন্ডের

নূর নিউজ

ভ্যালেন্টাইন’স ডে, অপসংস্কৃতির এক ভয়াল ছোবল: হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর

নূর নিউজ

যা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী

নূর নিউজ