পিআর নিয়ে গণঐকমত্য তৈরি হয়েছে; পিআর প্রশ্নে গণভোট দিতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিলো স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করা। এটা করতে গেলে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের সকল নাগরিকের মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পিআর পদ্ধতি-ই একমাত্র সমাধান।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের সকল মানুষের ভোটের দাম সমান। কারো ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে।

এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সকলের মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোন দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেনজি’র দাবী। এটা এখন জনগণের দাবী। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবী। সকল ধর্মের মানুষেরও দাবী। আজকের মঞ্চ এটা আবারো প্রমাণ করেছে।

আজ ২৮ জুন শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং দেশ ও ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত মহাসমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মহাসমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের যারা অংশ নিয়েছেন,গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক মহাসচিব- হিন্দু মহাজোট,
দয়াল কুমার বড়ুয়া-সভাপতি বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্র, জনবা নির্মল রোজারিও-সভাপতি, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, সভাপতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, অধ্যাপক জনাব মুজিবুর রহমান- নায়েবে আমীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার-সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,
রফিকুল ইসলাম খান-এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, মাওলানা মূসা বিন ইজহার-মহাসচিব নেজামে ইসলাম পার্টি, ডক্টর আহমাদ আবদুল কাদের-মহাসচিব খেলাফত মজলিস, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি- মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট, মুহাম্মদ আখতার হোসাইন-সদস্য সচিব এনসিপি,সারজিস আলম- মূখ্য সংগঠক এনসিপি উত্তরাঞ্চল, নূরুল হক নূর সভাপতি-গণঅধিকার পরিষদ, মাওলানা জালাল উদ্দীন মহসচিব-বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি-মহাসচিব, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, মজিবুর রহমান মঞ্জু-সভাপতিএবি পার্টি, মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব জনাব আখতার হোসেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মঞ্জু,এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ,মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মজিবর রহমান মঞ্জু, নুরুল হক নুর প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সারা দেশ থেকে আগত কয়েক লক্ষ নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সোহরাওয়ার্দি উদ্যানসহ শাহবাগ থেকে পল্টন মোড় ও কাকরাইল মসজিদ, দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুরো ঢাকা জুড়ে জনতার স্রোত সৃষ্টি হয়।

মহাসমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বেলা ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টায় সোহরাওয়ার্দির মূল মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। ফলে ১০টায়ই সমাবেশ শুরু করতে হয়।

মহাসমাবেশে সভাপতির ভাষণে পীর সাহেব চরমোনাই , বাহাত্তরের সংবিধানকে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণ দাবী করে বলেন, ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধান ছিলো দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও গণআকাংঙ্খা বিরোধী। সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিলো না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনক্ষেত্রেই কাক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয় নাই। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে জড়িতদের বিচার দাবী করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট জুলুমের রাষ্ট্র তৈরি করেছিলো। হাজার হাজার মানুষকে গুম ও খুন করেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। লাখো মানুষকে কারাবন্দি করেছে । চাঁদাবাজী করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করেছে। আর ২৪ এর জুলাইয়ে তো প্রকাশ্যে গণহত্যা করেছে। ফলে তাদের কোন ক্ষমা নাই। যারা সরাসরি ফৌজদারী অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করছি, অবিলম্বে ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনতেই হবে।

দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজীর ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোন পরিবর্তন হয় নাই। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। কারো নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর তার বক্তব্যে কৃষক, শ্রমিক, সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবি, আইন-শৃংখলা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তাদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা বান্ধব বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এবং প্রবাসীদের ভিআইপি দাবী করে তাদের উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে করণীয় সকল কিছু করার অঙ্গিকার করেন।

পীর সাহেব চরমোনাই তার বক্তব্যে উলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা, নারীর অধিকার, সম্মান এবং সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ নির্মাণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অঙ্গিকার তুলে ধরেন।

আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কে তার দলের ভাবনা তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, আমরা রাষ্ট্রে সুশাসন চাই। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানও জনতার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমরা ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দক্ষ ও সৎ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে নাই। শর্টকাট পথে ক্ষমতায় যেতে চায় নাই। নীতি বিসর্জন দেয় নাই। সবকিছুর উর্ধে আমরা ইসলাম, দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়েছি।

আগামীতেও আমরা জনপ্রত্যাশাকে পূরণ করতে চাই।

পীর সাহেব চরমোনাই তার বক্তব্যের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতের সম্মান প্রদর্শন করেন। একই সাথে ১৮৫৭ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ ও ৭১ এর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে তাদের আত্মত্যাগ বিফলে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য এ দেশের মানুষ শত শত বছর ধরে আত্মত্যাগ করে যাচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তের নজরানা পেশ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪-এর জুলাই-আগস্টেও আরেকটি গণঅভ্যূত্থান হয়েছে।

আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি এবং অসুস্থ রাজনীতির কারণে। সুতরাং জুলাই অভ্যুত্থানকেও আমরা অতীতের মতো ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আহতরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।

তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে। আরেকটা কথা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোন বিকল্প নাই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র।

অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল। এতো জনসমর্থন নিয়ে আর কোন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে নাই। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।

মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দলের যুগ্মমহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

ঘোষনাপত্রে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত আজকের এই মহাসমাবেশ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরেকটি গৌরাবোজ্জ্বল মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

আজকের মহাসমাবেশ রাষ্ট্র সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির পক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ধিতাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ জাতির শতবছরের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করছি-

সংগ্রামী উপস্থিতি!

গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনসমূহের মধ্যে ৬টি কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিলো। আমরা সেই প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি। ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্র রোধ করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার বিষয়টি মূখ্য রেখে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। আমাদের প্রস্তাবনাগুলোকে সক্রিয় বিবেচনায় নেয়ার জন্য আজকের মহাসমাবেশ থেকে আহবান জানাচ্ছি।

সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা চলমান রয়েছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে আজকের এই জনসমুদ্র থেকে আমরা ঘোষণা করছি যে,

১. সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের সাথে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি” এ বিষয়টি অবশ্যই পূনঃস্থাপন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বের জন্য ইসলাম হলো রক্ষাকবচ। তার প্রতিফলন সংবিধানের মূলনীতিতে থাকতে হবে।

২. সংসদের প্রস্তাবিত উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।

৩. জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন শোষন নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।

৪. আগামী দিনে বাংলাদেশে যাতে কোন নির্বাচিত স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও সন্ত্রাসী শ্রেনী রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে না পারে এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনী মৌলিক রাষ্ট্রসংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অপরিহার্য। সেটা নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
পতিত ফ্যাসিবাদের সহযোগী যারা এখনো জনপ্রশাসনে কাজ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। না হলে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেই যাবে।

৬. পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এবং বিদেশে পালাতক অপরাধীদের আটক করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে।

৭. দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সক্রিয়, কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৮. দেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুনখারাবি রোধে প্রশাসনকে আরো কার্যকর ও অবিচল হতে হবে।

৯. ভারতের সাথে কৃত সকল চুক্তি জনসন্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং সকল দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে।

১০. জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সকল পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আগামীতেও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল স্থানীয় নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন করতে হবে।

১১. চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

১২. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে দেশে অবশ্যই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। সকল দলের জন্য সমতল পরিবেশ এবং সমান সুযোগ তৈরী ছাড়া কোন রাজনৈতিক পক্ষ বা ভিন্ন কোন দেশের চাপে অতীতের মতো যেন-তেন একটি নির্বাচনের জন্যে তফসিল ঘোষণা করা হলে তা কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না।

১৩. ঘুষ, দূর্নীতিসহ সকল প্রকার নাগরিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কোন নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক কারণে হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করতে হবে। হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের কোথাও কোন রকম মব সৃষ্টির সুযোগ দেয়া যাবে না। মব সৃষ্টিকারীদের দমনে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী যে কোন কার্যক্রমে দ্রুততম সময়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গণবিক্ষোভ পুঞ্জীভূত না হয়।

১৪. দেশ বিরোধী ও ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারনবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৫. আগামী জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

১৬. রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা, সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ইসলামের সুমহান আলোকিত আদর্শের অনুশীলন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই, মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, মুহাদ্দিস আব্দুল হক আজাদ, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলান গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মুফতি এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান। মহাসমাবেশের প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

মহাসমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শাহ ইফতেখার তারিক ও সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু

নূর নিউজ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় বসুন্ধরা

নূর নিউজ

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো ইসলামী ঐক্যজোট

আনসারুল হক