ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বীরোচিত ভূমিকা ছিল

‘এই দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রাম চলেছে, তাতে আলেম-ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বীরোচিত ও মহান ভূমিকা রেখেছেন’—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সোমবার যাত্রাবাড়ীর জামিয়া মাহমুদিয়া মাদরাসায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ আয়োজিত ‘মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’-তে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিনের অনুষ্ঠান ছিল চব্বিশ সালের ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ এবং তার নেতৃত্বদানকারী আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্মরণে নিবেদিত।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এই লড়াই শুধু ২০২৪ সালের রাজনৈতিক লড়াই ছিল না, বরং এর শিকড় ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে শুরু হওয়া ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক বয়ানে নিহিত ছিল। সেই বয়ানই আজ বিজয়ী হয়েছে। আর এই আন্দোলনের প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন আলেম-ওলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা—যাঁরা হাসিনা সরকার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং শহীদ হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লবের এক বছর পর যখন আমরা সহযোদ্ধাদের মধ্যে অনৈক্য দেখি, তখন কষ্ট পাই। এই অনৈক্য যেন আবার ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রত্যাবর্তনের পথ না খুলে দেয়। তাই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান থাকবে—আপনারা প্রতিযোগিতা করুন, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জনগণের অধিকার ও ৯০% মুসলমানের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’

সরকারের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শহীদ পরিবারের দাবি-দাওয়া অনতিবিলম্বে মেনে নিন এবং হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করুন। বিচার নিয়ে যেন কোনো টালবাহানা না হয়।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘যুগের পর যুগ আলেম সমাজ দেশের জন্য আত্মত্যাগ করলেও মিডিয়া ও এলিট শ্রেণি তাদের অবদান স্বীকার করে না। তবে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাদের ত্যাগ ও বীরত্বগাথা তুলে ধরছে।’

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়েই সফল হয়েছে জুলাই বিপ্লব। ভবিষ্যতেও তাদের নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাবে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল অনন্য। তাদের দৃঢ়তা, সাহস এবং আত্মত্যাগ বিপ্লবকে সফল করেছে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘চব্বিশ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দিতেই আজকের এ আয়োজন।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, শহীদ পরিবারের সদস্য, বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিবৃন্দ।

সমাবেশে বিকাল ৩টার আগেই হাজারো জনতা জমায়েত হন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে অংশ নেন মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। আয়োজনে হামদ-নাত, নাশিদ, কবিতা আবৃত্তি, প্রতিবাদী গান ও তথ্যচিত্র ‘ছত্রিশে জুলাই’ ও ‘সাদা জোব্বা, লাল রক্ত’ প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শহীদ মাওলানা খুবাইবের বড় ভাই মুফতি সোহাইল ও শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর পিতা ডা. আব্দুর রহমান মিয়া।

তবে অনুষ্ঠানের পূর্বঘোষিত সময় রাত ১১টা পর্যন্ত থাকলেও সন্ধ্যার আগেই তা সংক্ষিপ্ত করে শেষ করা হয়। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু হতাহতের ঘটনায় অনুষ্ঠান বন্ধ করে শেষপর্বে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। আহতদের সুস্থতা এবং নিহতদের মাগফিরাত কামনায় সবাই হাত তোলেন।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ

৫ বিভাগের ৫৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম 

আনসারুল হক

কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক

আনসারুল হক

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এই কাজী হাবিবুল আউয়াল?

নূর নিউজ