ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ালো কাতার সরকার

ভয়াবহ ভূমিকম্পে আবারও বিপর্যস্ত আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল। কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশে গত রবিবার রাতের এ কম্পনে বহু ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, আহত হয়েছেন শত শত মানুষ এবং নিহত হয়েছেন অনেকে। দুর্যোগকবলিত এলাকায় হাজারো মানুষ এখন খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার তীব্র সংকটে দিন পার করছে। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে কাতার সরকার।

বুধবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়সামগ্রীসহ জরুরি সহায়তা কাবুলে পৌঁছেছে, যা প্রায় ১১ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কাতারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী মরিয়ম বিনতে আলী বিন নাসির আল-স্যান্ডের নেতৃত্বে একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল এই সহায়তা নিয়ে কাবুলে পৌঁছেছেন। কাবুলে অবস্থানরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাতার সরকারের এই সহায়তা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে। চিকিৎসা সামগ্রী, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করা হবে।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানের অবস্থা

ভূমিকম্পে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশ। অনেক গ্রামে ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসা সহায়তার ঘাটতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা শীত-দুর্ভোগে কষ্ট পাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা না পেলে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তালেবান-কাতার সম্পর্ক

আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক তালেবান সরকারের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দোহা ছিল তালেবানদের রাজনৈতিক দপ্তরের কেন্দ্র। এমনকি মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়ও কাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তালেবান নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের আলোচনায় কাতার মধ্যস্থতার কাজ করেছে। এ কারণে তালেবান সরকারের কাছে কাতারের উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কাতারের এই সহায়তা শুধু মানবিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রেও প্রতিফলন ঘটায়।

মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে কাতারের ভূমিকা

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় কাতার দোহায় বৈঠকের আয়োজন করে এবং তালেবান-আমেরিকা আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সেই সূত্রে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে কাতারের আস্থা ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক পরিসরে তালেবানের বৈধতা অর্জনের পথে কাতারই অন্যতম সহায়ক শক্তি। তাই কাতারের এ উদ্যোগ তালেবান সরকারের জন্য একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহের পথ খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে মানবিক সংকট মোকাবেলায় কার্যকর অবদান রাখছে।

জরুরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ এখন মারাত্মক সংকটে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, কয়েক হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে অনেকে বৃষ্টি ও শীতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মানবিক সংস্থাগুলোও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, আফগানিস্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার জন্য।

তালেবানের আহ্বান

তালেবান প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকম্প দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। কাবুলে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগান জনগণ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত। ভূমিকম্প, বন্যা ও অর্থনৈতিক সংকটে দেশটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সময়ে মুসলিম দেশগুলোসহ বৈশ্বিক মানবিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, কাতারের মতো অন্যান্য রাষ্ট্রও শিগগির সহায়তার হাত বাড়াবে।

আফগানিস্তান বহু বছর ধরে যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। তার ওপর ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। কাতারের এই সহায়তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য আরও ব্যাপক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আফগানিস্তানকে একা এই সংকট সামলাতে দেওয়া যাবে না।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এ বছর হজ করতে পারবেন ১০ লাখ মানুষ

নূর নিউজ

ওমরাহ পালনকারীদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে সৌদি ছাড়ার নির্দেশ

আনসারুল হক

বিশ্বব্যাপী একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্ত ভারতে

আনসারুল হক