ভোলায় বন্যা ও বেড়িবাঁধ ভেঙে চরম দুর্ভোগে ৩০ হাজার মানুষ

  • এইচ এম হাছনাইন, ভোলা প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় নদ-নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা। এতে জেলার মনপুরা, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। ঘরছাড়া অসংখ্য পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জায়গা কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মনপুরার কলাতলী, ঢালচর ও সাকুচিয়া চরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হঠাৎ জোয়ার ও ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, ভেসে গেছে গবাদি পশু ও মাছের ঘের।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যাকবলিতদের সহায়তা দিতে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১,৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তিনধাপে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে—দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং পরবর্তী সময়ে। ইতোমধ্যে ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১৪টি মাটির কেল্লায় বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে এবং সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”

দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছে সিপিপি, রেডক্রিসেন্টসহ ১৩,৮০০ স্বেচ্ছাসেবক। পানিবন্দি মানুষের জন্য ৯৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগে মজুদ রাখা হয়েছে ২৯১ মেট্রিক টন চাল, দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই দিন ধরে ভোলার আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

স্থানীয়রা বলছেন, অতীতেও এমন দুর্যোগ দেখা গেছে, তবে এবারের জোয়ারের পানি অনেক বেশি দ্রুত এবং ভয়াবহভাবে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দ্রুত বাঁধ সংস্কার, পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ এখনো কাটেনি, তবে সব রকম প্রস্তুতি ও সহায়তা অব্যাহত আছে—এমনটাই আশ্বাস ভোলা জেলা প্রশাসনের।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

চালু হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ পদক

নূর নিউজ

ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে শুরু হচ্ছে ‘হাদিসের দরস’

আনসারুল হক

ইসির সঙ্গে বৈঠক; ভোটের হার নিয়ে জানতে চায় ইইউর বিশেষজ্ঞ দল

নূর নিউজ