মিথ্যা জঙ্গি মামলায় ফাঁসিয়ে ইসলামপন্থীদের দমন, অভিযোগ বিশিষ্ট লেখক-গবেষকদের

ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা জঙ্গি মামলার প্রতিবাদে এবং জনপরিসরে ইসলামের অবস্থান সংকুচিত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক আসিফ আদনান এবং জাকারিয়া মাসউদ।
একটি কথিত ‘জঙ্গি মামলায়’ তাদের নাম মিথ্যাভাবে জড়িয়ে মানহানিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার ( ১৭ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লারের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লেখক আহমাদ রফিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. মাহদি হাসান, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা ইনতিসার ইনজিমাম, হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার, বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ আরও অনেকে।

আসিফ আদনান বলেন, ‘১৫ জুলাই একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যে দেখি, একটি তথাকথিত জঙ্গি মামলায় আমাকে, দাঈ ও লেখক জাকারিয়া মাসউদকে এবং আলেম রেজাউল করিম আবরারকে ‘পলাতক আসামি’ দেখানো হয়েছে। অথচ আমরা নিয়মিতভাবে দাওয়াতি কাজে যুক্ত, সেমিনার ও বক্তব্যে সক্রিয়।’

তিনি জানান, মামলাটি করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (ATU)। এই মামলাকে তিনি “ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত” উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ড খোলা ডোমেইনে, জনসম্মুখে চলে। আমাদের অপরাধ একটাই—আমরা ইসলামের পক্ষে কথা বলি।’

আসিফ আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের অবস্থান স্পষ্ট। এরই প্রতিশোধ হিসেবে এই মামলা দায়ের হতে পারে। যেন একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে—ইসলামের পক্ষে অবস্থান মানেই রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হওয়া।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি শুধু মানহানিকর নয়, বরং আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অতীতে ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে বহু মানুষকে গুম, নির্যাতন, এমনকি হত্যার শিকার করা হয়েছে। আজ মামলা, কাল হয়তো গুম—এর নিশ্চয়তা কে দেবে?’

আসিফ বলেন, ‘যদি পরিচিত মানুষজনই এই ‘নাটকীয়’ মামলার শিকার হন, তাহলে সাধারণ মাদ্রাসাশিক্ষক, ছাত্র, চাকরিজীবী বা ধর্মপ্রাণ মুসলমান কতটা নিরাপদ?’

তিনি সতর্ক করেন, ‘একবার ‘জঙ্গি’ তকমা চালু হলে, সেটি কেবল ইসলামপন্থী নয়—সব ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে। শেখ হাসিনার আমলে তাই হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট লংমার্চে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলে প্রচার করা হয়েছিল। আজ একই কৌশল পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাসিনার শাসনামলে জঙ্গিবাদ দমন নাটককে কেন্দ্র করে একটি ফান্ডিং ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা আসত, আর সেই অর্থ বণ্টিত হতো বিভিন্ন সংস্থা, অফিসার, এনজিও এবং কিছু সাংবাদিকের মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘তখন ইসলামি পোশাক, টুপি, দাড়ি, ইসলামি বই পড়া পর্যন্ত ‘উগ্রবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এটি ইসলামের সামাজিক প্রভাব ধ্বংসের অংশ হিসেবে করা হতো।’

আরও বলেন, ‘এই মামলাগুলোতে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ থাকে না। বিচার, প্রমাণ, তদন্ত—কিছুই নেই। অপবাদই শাস্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে কি কোনো সভ্য দেশে বিচার চলে?’

আসিফ বলেন, ‘গুম কমিশনের রিপোর্ট, আয়নাঘর তদন্ত এবং স্বাধীন অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকার ‘জঙ্গি দমন’-এর নামে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে। যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে বর্বরতা—সবই ঘটেছে। আজ সেই ‘জাহেলিয়াত’ ফিরে আসছে।’

তিনি জানান, তারা আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একই সঙ্গে সাংবাদিক, আইনজীবী ও ইসলামপন্থী সব শক্তিকে আহ্বান জানান, ‌‌‘এই ফ্যাসিবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। এই ‘জঙ্গি নাটক’ বন্ধ করতে হবে। যারা এর রচয়িতা, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি সব গণমাধ্যমকে সত্য প্রকাশে সাহসী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।

সংবাদ সম্মেলনটি বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

চালু হচ্ছে আরও ৬ ট্রেন

আনসারুল হক

২২৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আনসারুল হক

কোন্ দিকে ঝুঁকছে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো?

আনসারুল হক