রাজাকারের রাজনীতি: পুরনো ট্যাগে বিভাজন নয়, চাই ইতিবাচক ও গঠনমূলক সমালোচনা

রাজনৈতিক ইতিহাসে “রাজাকার” শব্দটি একসময় ছিল জাতীয় ঘৃণার প্রতীক। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে চিহ্নিত করতে এটি ছিল একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য শব্দ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সময়ের ব্যবধানে এটি পরিণত হয়েছে একটি রাজনৈতিক অ’স্ত্রে— যার ব্যবহার আজ শালীনতা, যুক্তি ও বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ প্রতিটি সভা-সমাবেশে এই শব্দটি বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও তারা “পাকিস্তানপন্থী” বলে অপমান করতে পিছপা হয়নি।

আজ বিএনপি সেই একই অ’স্ত্র ব্যবহার করছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে। তবে বিএনপির এটা বুঝতে হবে—জনগণ এখন আর “রাজাকার” শব্দে সায় দেয় না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশের রাজনীতিতে সচেতনতার যে নতুন ধারা শুরু হয়েছে, তাতে এই ট্যাগিং কৌশল এখন হাস্যকর ও বিশ্বাসযোগ্যতাহীন।

এইভাবে রাজনীতি করে হয়তো প্রতিবেশী দেশের দাদাদের খুশি করা সম্ভব, কিন্তু দেশের জনগণকে নয়। সত্যিকারের রাজনৈতিক সমালোচনা করতে হলে যুক্তিভিত্তিক, বাস্তবমুখী ও দায়িত্বশীল ভাষা ও কৌশল ব্যবহার করতে হবে।

এখানে স্মরণযোগ্য, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর রাজাকারদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং সেই বিচারে সম্ভবত একজনকে দণ্ডও প্রদান করা হয়। কিন্তু পরে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ার ইতি টানেন। অথচ পরবর্তীতে তারই কন্যা শেখ হাসিনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের একতরফা বিচারের নামে জামায়াত-বিএনপির ওপর প্রতিহিংসা মেটানোর চেষ্টা করেন। এই বিচার প্রক্রিয়ায় ছিল মারাত্মক ত্রুটি, পক্ষপাতের অভিযোগ এবং আন্তর্জাতিক বিতর্ক।

আজ দেশে সক্রিয় কোনো রাজাকার নেই। স্বাধীনতার পর জন্ম নেওয়া জামায়াতের বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি দায়িত্বশীল। উপরন্তু, দলটির শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পেয়েছেন। এসব বাস্তবতায় “রাজাকার” শব্দের রাজনৈতিক ব্যবহারের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক পথে হাঁটছে। বিএনপির উচিত—পুরনো ও অচল কৌশল থেকে সরে এসে নতুন ধারার গঠনমূলক রাজনীতিতে ফিরে যাওয়া। শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে প্রজ্ঞাভিত্তিক রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করেছেন, বিএনপিকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আজ সেই পথেই ফিরতে হবে।

রাজনীতি হোক ভবিষ্যতের জন্য, অতীত টেনে আনা নয়।

আনসারুল হক ইমরান
সম্পাদক, নূর নিউজ ২৪

এ জাতীয় আরো সংবাদ

হেফাজত কারো ‌‌‌‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি : মাওলানা মহিঊদ্দিন রব্বানী

আনসারুল হক

মুসলমানদের জায়গা দখল করার পাঁয়তারা করছে মোদি সরকার: ক‌ওমি পরিষদ

আনসারুল হক

ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস : মুসলমানদের সম্পত্তি গ্রাসের নীলনকশা

আনসারুল হক