ছাত্র–গণঅভ্যুত্থান দমন করতে না পারলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ছিল দেশে মার্শাল ল জারি করার। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়েও তিনি প্রস্তুত ছিলেন। এ গোপন পরিকল্পনা জানতেন কেবল হাসিনার অতিঘনিষ্ঠ কয়েকজন—যাদের মধ্যে শেখ রেহানা ও প্রধান উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অন্যতম।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখ রেহানা ও সালমান এফ রহমানের সর্বশেষ টেলিফোন সংলাপে মার্শাল ল প্রসঙ্গ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শেখ রেহানা–সালমান এফ রহমানের টেলিফোন সংলাপ
কর্নেল রাজীব (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এএমএসপিএম): স্লামালাইকুম স্যার।
সালমান রহমান: হ্যালো।
কর্নেল রাজীব: কর্নেল রাজীব বলছি স্যার। রেহানা আপা একটু কথা বলবেন, ওভার টু ওভার স্যার।
সালমান রহমান: কে?
কর্নেল রাজীব: রেহানা আপা।
শেখ রেহানা: স্লামালাইকুম ভাইয়া।
সালমান রহমান: হ্যাঁ, ওয়ালাইকুমুস সালাম।
শেখ রেহানা: আপনি কই?
সালমান রহমান: আমি আমার বাসায়।
শেখ রেহানা: থাইকেন না।
সালমান রহমান: থাকব না; ঠিক আছে।
শেখ রেহানা: আমরা অন্য জায়গায় আছি… ববি, টিউলিপ (ছেলে–মেয়ে) কনভিন্স করেছে। ফোন না করতে পারলেও আল্লাহ যদি বাঁচাই রাখে, কথা হবে।
সালমান রহমান: আচ্ছা, তোমরা অন্য জায়গায় চলে গেছ? আপাও (শেখ হাসিনা) গেছে?
শেখ রেহানা: জি ভাই। তো আপনি…
সালমান রহমান: আমরা যদি বাহির হইতে পারি, বাহির হইয়া যাব। আনিসুলকেও (আইনমন্ত্রী) বের করে ফেলি সাথে।
শেখ রেহানা: হ্যাঁ, হ্যাঁ। ইমিডিয়েটলি আপনি সায়ান (সালমানের ছেলে) আর জয় (শেখ হাসিনার ছেলে) যেটা বলছে, সেটা করেন।
সালমান রহমান: ঠিক আছে।
শেখ রেহানা: এক সেকেন্ডও দেরি কইরেন না। কারণ শম্পার বাসায় গেছে, কথা চলছে। চারদিকে সাদা জুব্বাওয়ালা আর দাড়িওয়ালা… ইউ শুড লিভ, এখানে থাকা একদম সেইফ না।
সালমান রহমান: আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে। ও কী বলে? মার্শাল ল’ ডিক্লেয়ার করতেছে না ক্যান?
শেখ রেহানা: ওগুলোতে এখন আর কান দিয়েন না। ইউ শুড লিভ ইমিডিয়েটলি। এক সেকেন্ডও দেরি কইরেন না।
সালমান রহমান: ওকে।
শেখ রেহানা: জি ভাইয়া, ফি আমানিল্লাহ। দোয়া কইরেন।
সালমান রহমান: ফি আমানিল্লাহ। ফি আমানিল্লাহ।
শেখ রেহানা: স্লামালিকুম।
সালমান রহমান: স্লামালিকুম।
মার্শাল ল’ ও জরুরি অবস্থার প্রচেষ্টা
এই সংলাপ থেকে স্পষ্ট হয় যে, শেখ হাসিনা সেনাপ্রধানের মাধ্যমে মার্শাল ল’ ঘোষণার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে জানিয়ে দেন—“সেনাবাহিনী ছাত্র–জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করবে না।” এরপর শেখ হাসিনা জরুরি অবস্থা জারির উদ্যোগ নেন এবং রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিও ব্যর্থ হয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও পরদিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে মার্শাল ল’ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে পরিষ্কার হয়, শেখ হাসিনার পরিকল্পনার বিষয়টি রাজনৈতিক মিত্রদের কাছেও অজানা ছিল না।