সংস্কারের দায়িত্ব পালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে — এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে জুলাই ঘোষণাপত্রে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক। তিনি আজ বাংলাদেশ খেলাফত শ্রমিক মজলিসের উদ্যোগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন হওয়া দরকার ছিল যাতে দুর্বৃত্তায়ন, পেশিশক্তি, কালোটাকা ও সন্ত্রাসের আধিপত্য বন্ধ হয়। কিন্তু পাঁচ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার ভাষনে সেই অভিপ্রায় দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাঙ্ক্ষিত মান তো দূরের কথা, ন্যূনতম সংস্কারের প্রত্যাশাও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতায় বিএনপিরও বড় ভূমিকা রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শ্রমিক জনতার অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মুফতি শরাফত হোসাইনের সভাপতিত্বে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশন উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। সদস্য সচিব মাওলানা আবু সাঈদ নোমান ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান হেলালের যৌথ পরিচালনায় কনভেনশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, এডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা তফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূইয়া, ছাত্র মজলিসের সভাপতি পরিষদ সদস্য মাহদি হাসান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা মামুনুর রশীদ, মাওলানা আমজাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা সানাউল্লাহ আমীনি প্রমুখ।
কনভেনশনে বিগত জুলাই অভ্যুত্থানে শ্রমিক জনতার অবদান তুলে ধরে মাওলানা মামুনুল হক বলেন,
পৃথিবীর প্রতিটি বিপ্লব ও আন্দোলনে শ্রমিক জনতার অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে। চব্বিশের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র জনতা, কিন্তু রাজপথ দখল ও ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে রক্ত ও জীবন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিলেন বাংলাদেশের শ্রমিক জনতা। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের নিরলস ও সংগ্রামী ভূমিকার জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এটি বাংলাদেশের ব্যর্থতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা। আমি বাংলাদেশের শ্রমিক জনতাকে অভিনন্দন জানাই এবং নিজেদের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
উচ্চকক্ষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেও, দেশের বর্তমান সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের দ্বিমতের কারণে এটি কার্যকর হবে না। পিআর পদ্ধতি না থাকলে উচ্চকক্ষ কেবল ‘বেকার পুনর্বাসনের উচ্চকক্ষ’ হবে, যা আমরা চাই না।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন,
আপনারা যদি প্রকৃত অর্থবহ উচ্চকক্ষ না গড়ে- বেকার পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে কেবল এমপি বাড়িয়ে রাষ্ট্রের উপর বোঝা চাপিয়ে দেন, তবে তা মেহনতি মানুষের সঙ্গে দুর্বিসন্ধি হবে।
ফ্যাসিবাদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,
খুনীদের বিচার নিশ্চিত করতে কিছু মামলা হয়েছে, কিন্তু একটি মামলাতেও রায় হয়নি। উল্টো ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত মানুষ এখনো মামলার ঘানি টানছে। শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মামলা আজও আমাদের নামে রয়েছে। আইনের নামে বেআইনি শাসন আমরা মেনে নেব না।
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ঘোষণাপত্রে বঙ্গভঙ্গ, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর— কোথাও উল্লেখ নেই। অথচ এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের ভিত্তি। শাপলা চত্বর ছাড়া চব্বিশের বিপ্লবের পাটাতন তৈরি হতো না। এছাড়া ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডকেও ঘোষণায় স্থান দিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দায়িত্ব নিয়েছেন যখন, নির্বাচনী লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি ছাড়া আপনার মুক্তির উপায় নেই। শাপলার রক্তকে স্বীকৃতি, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও জাতীয় ষড়যন্ত্রকে ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করে সেটিকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
কনভেনশনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিকী, খেলাফত শ্রমিক মজলিসের উচ্চতর পরিষদ সদস্য শরিফুজ্জামান জসিম প্রমুখ।