সংবিধান সংস্কার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ থেকে ১৬ দফা দাবিতে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার (তারিখ উল্লেখ করুন) দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত আজকের এই মহাসমাবেশ আগামীর বাংলাদেশ গঠনে এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন—এসব দাবির পক্ষে এই মহাসমাবেশকে আমরা সেই বর্ধিত ঐতিহাসিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছি।”
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনের ৬টি প্রস্তাবনা তারা পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছে। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং জনমতের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে দলটি নিজেদের সুস্পষ্ট সুপারিশ কমিশনে জমা দিয়েছে।
ঘোষণাপত্রে উপস্থাপিত ১৬ দফা দাবি:
১. সংবিধানের মূলনীতিতে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” পুনঃস্থাপন করতে হবে। কেননা, ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ।
২. সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. বৈষম্য, শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে।
৪. ভবিষ্যৎ স্বৈরশাসন ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসন পুনর্গঠন ও ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের অপসারণ করতে হবে।
৬. পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত ও বিদেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
৭. পাচার হওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৮. চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও সহিংসতা দমনে প্রশাসনকে কঠোর ও কার্যকর হতে হবে।
৯. ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে।
১০. জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং তা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালনার বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
১১. চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। চাপের মুখে ঘোষিত ‘যেন-তেন নির্বাচন’ মেনে নেওয়া হবে না।
১৩. ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ, রাজনৈতিক হয়রানি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৪. দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৫. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ইসলামী ও দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য গঠন করতে হবে।
১৬. দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের নিরাপত্তা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সার্বিক অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আদর্শের চর্চা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।