মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে দেওয়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দিকে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য প্রমাণ। বিশ্বের কোনো আদালতেই এ সাক্ষ্যকে দুর্বল প্রমাণ করার সুযোগ নেই। এটি শুধু জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঘটনা নয়, গত ১৫ বছরে যত গুম-খুন হয়েছে তার বিরুদ্ধেও এটি এক অপ্রতিরোধ্য দলিল।”
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে সাবেক আইজিপি মামুন জবানবন্দি দেন। তিনি স্বীকার করেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তিনি পান এবং সেটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।
তার বক্তব্যে উঠে আসে—
- আন্দোলন দমনে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের অতি উৎসাহ।
- আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের প্ররোচনায় শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ।
- আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও ব্লক রেইডের মতো সামরিক কৌশল প্রয়োগ।
- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় প্রতিরাতের ‘কোর কমিটি’ বৈঠকে আন্দোলনকারীদের আটক ও দমন পরিকল্পনা।
- সমন্বয়কদের আটক ও ডিবি হেফাজতে চাপ প্রয়োগ করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ঘটনা।
- ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত।
জবানবন্দিতে মামুন আরও জানান, র্যাবের মহাপরিচালক থাকার সময় গোপন বন্দিশালা, অপহরণ, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মতো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে। এ নির্দেশ আসত সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে।
তিনি অনুতপ্ত কণ্ঠে বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করছি। আমি নিহত পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার সত্য ভাষণের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক আইজিপি নিজের বিবেকের তাড়নায় রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি ক্ষমা পাবেন কি না, তা ট্রাইব্যুনালই সিদ্ধান্ত নেবে।
এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামসহ মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও অন্যান্য প্রসিকিউটর। পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
সূত্র : বাসস