হাসিনার পতনের খবর ছড়ানোর পরও যাত্রাবাড়ীতে ৫২ জনকে হত্যা করে পুলিশ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় দিন। সেনাপ্রধানের ভাষণ ঘোষণার পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের গুঞ্জন যখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শুরু হয় ভয়াবহ পুলিশি অভিযান। বিবিসির সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সেদিন পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যা এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভের শেষ দিনে কীভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়, তা জানার জন্য তারা শতাধিক ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করেছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নিয়েছে এবং একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছে ঘটনাস্থল।

মোবাইল ক্যামেরায় ধরা পড়ে মৃত্যুর দৃশ্য
এক আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেন নিজের মোবাইলে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যার মাধ্যমে পুলিশের গুলিবর্ষণের সূত্রপাত ও আচরণ পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। মিরাজ নিজেও পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যা সময়ানুযায়ী বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পরেই শুরু হয় গুলি

ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভির মাধ্যমে জানা যায়, বিক্ষোভকারীদের সামনে অবস্থান করা সেনা সদস্যরা হঠাৎ পিছু হটে গেলে যাত্রাবাড়ী থানার ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে সেই হামলা।

ড্রোন ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ, আহতদের তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া, আর আতঙ্কে পালাতে থাকা মানুষদের করুণ দৃশ্য।

বিবিসির অনুসন্ধানে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি

শুরুতে নিহতের সংখ্যা ৩০ জন বলে জানানো হলেও, নিহতদের পরিবার, হাসপাতালের নথি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং现场 প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কমপক্ষে ৫২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। এছাড়া পুলিশের ছয়জন সদস্যও প্রাণ হারান।

পুলিশের বক্তব্য ও তদন্ত

বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেন যে, “জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশ সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন এবং অপেশাদার আচরণ করেছেন।” একইসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

তৎকালীন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর নীরবতা

ঘটনার সময় উপস্থিত সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আল আকসা মসজিদে ইসরাইলি হামলা, ওআইসির সভায় বাংলাদেশের নিন্দা

নূর নিউজ

প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নূর নিউজ

হিন্দু ছেলেকে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ভারতে মুসলিম কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যা

আনসারুল হক