ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) সংলাপ শেষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “দেশে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার প্রয়োজন। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে ঐকমত্য না আসে, তবে এই সংস্কারের প্রশ্নে সরাসরি জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য গণভোটে যেতে হবে।”
তিনি বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, যারা এতদিন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার পক্ষে কথা বলতেন, তারাই আজ এনসিসি গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। বিশেষত, বামপন্থী কিছু দল বলছে—এটা এখন না করে পরে করা যেতে পারে। এটি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে।”
সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে অংশ নেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।
গাজী আতাউর রহমান বলেন, “স্বাধীনতার পর সকল সরকারই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে দুর্বল করেছে। সেই অপসংস্কৃতি রোধের জন্যই এনসিসি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এটি কোনওভাবেই নির্বাহী বিভাগে হস্তক্ষেপ করবে না, বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্য নিয়োগে ভূমিকা রাখবে।”
তবে রাষ্ট্রপতির এনসিসির সদস্য হওয়ার প্রস্তাবকে “বেমানান” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির কাছে এনসিসি প্রস্তাব দেবে—সেক্ষেত্রে তাঁকেই যদি সদস্য করা হয়, তাহলে নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হবে। বরং এনসিসির বাইরে থেকে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা থাকা উচিত, যেনো প্রয়োজনে তাঁর শরণাপন্ন হওয়া যায়।”
এ ছাড়া এনসিসির কাঠামোয় প্রধান বিচারপতি অথবা বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।
এনসিসি নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বলেও জানান তিনি। তাঁর মতে, “যারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে চায় না, তারাই এনসিসিকে ভয় পায়।”
সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিয়োগ এনসিসির আওতায় না আনার পক্ষে মত জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারেই থাকা উচিত। তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এনসিসির অধীনে আসা উচিত।”
শেষে তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান দাবি ছিল—ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্র ঠেকানো। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার আজ না হলে কালও হবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছালে, জনগণের রায় নেওয়ার জন্য গণভোটই হতে পারে একমাত্র পথ।”