সাবেক তিন ইসির বিরুদ্ধে মামলায় যুক্ত হল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ

বিএনপির দায়ের করা মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকার জন্য এ অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার মামলায় দণ্ডবিধির ১২০(ক), ৪২০ ও ৪০৬ ধারা যুক্ত করার আবেদন করলে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান তা মঞ্জুর করেন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেন ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রফিকুল ইসলাম।

মামলাটি করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। মামলায় প্রধান অভিযুক্তরা হলেন—২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের সিইসি কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইতোমধ্যে নূরুল হুদা ও হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক পাঁচ পুলিশ মহাপরিদর্শক—হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।

মামলার অভিযোগ

তিনটি জাতীয় নির্বাচনে গায়েবি মামলা, গুম, খুন, অপহরণ এবং ভয়ভীতির মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচন আয়োজন, আচরণবিধি ভঙ্গ, সরকারি পদ ব্যবহার করে ভোটে হস্তক্ষেপ এবং ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য ঘোষণা করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ভোটার, কেন্দ্রের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর প্রেক্ষাপট

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করে। এরপর তাদের আমলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন: বিএনপিসহ প্রধান বিরোধীদলগুলোর বর্জনের মধ্যে ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এ নির্বাচন ‘বিনা ভোটের নির্বাচন’ নামে পরিচিতি পায়।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন: বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে পড়ে যাওয়ার দাবি তোলে বিরোধীরা। মাত্র ৭টি আসনে জয় পায় বিএনপি ও তার শরিকরা।

২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের পর ‘আমি আর ডামি’ বলে আখ্যায়িত হয় এ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হন মূলত দলীয় বিদ্রোহীরা।

এই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে টানা ১৫ বছর দেশ শাসন করে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের মুখে পড়ে।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

হাইকোর্ট ২০২3 সালের ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেন, যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের পথ উন্মুক্ত হয়। ওই রায়ে বলা হয়, সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলোতে জনআস্থা ধ্বংস হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত তিন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

‘লাকি সিনেমা হল’ এখন ‘ক্যাডেট মাদরাসা’ খুশি স্থানীয়রা

নূর নিউজ

১২ দিনে দেশে ১০০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা

আনসারুল হক

প্রকাশ্যে ধূমপান অপরাধ, মনে করিয়ে দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আনসারুল হক