ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশে শরিয়া আইন চালু করে আফগানিস্তানের মতো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় প্রচারিত খালেদ মুহিউদ্দীনের “ঠিকানা” ইউটিউব টকশোতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্ন ছিল—বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে কী এমন কোনো মডেল আছে, যেখানে শরিয়া বাস্তবায়ন হচ্ছে? উত্তরে ফয়জুল করীম বলেন, “আপনি আফগানিস্তানে দেখতে পারেন, সেখানে শরিয়া অনেক বেশি বাস্তবায়িত হচ্ছে।” তখন উপস্থাপক পাল্টা প্রশ্ন করেন—“আপনি কি আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ বানাতে চান?” জবাবে ফয়জুল করীম সরাসরি বলেন, “হ্যাঁ, বানাতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমাদের আদর্শ ও নীতিমালা কোরআন-হাদিসে নির্ধারিত। আমরা ক্ষমতায় গেলে শরিয়া মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করব। তবে শরিয়া প্রতিষ্ঠার অর্থ কোনো সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম নয়।”
সেই প্রসঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “আমরা এমন একটি শাসনব্যবস্থা চালু করবো, যেখানে হিন্দু-খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
টকশোতে ফয়জুল করীম আরও বলেন, “ইরান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা রাশিয়ার মধ্যে যেসব রাষ্ট্রদর্শন ইসলামবিরোধী নয়, সেগুলো প্রয়োজনে গ্রহণ করা হবে। ভালো কিছু থাকলে সেটা মুসলমানের জন্য গ্রহণযোগ্য, যদি তা শরিয়াবিরোধী না হয়।”
সম্প্রতি ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে জামায়াত ইসলামীর একাধিক নেতার উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সমঝোতার ইঙ্গিত মিলছে।
তবে অতীতে ফয়জুল করীম জামায়াত নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন। এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, “ইসলাম ধ্বংস করতে জামায়াতই যথেষ্ট।” এ বক্তব্য থেকে তিনি সরবেন কি না—এমন প্রশ্নে ফয়জুল করীম বলেন, “একটি বিষয়ে ঐকমত্য হলেই কেউ একমঞ্চে আসতে পারে, তার মানে এই নয় যে আদর্শ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আমি আমার অবস্থানে অটল, তারাও তাদের অবস্থানে রয়েছে।”
মহাসমাবেশে জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অনেক দল থাকলেও বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে ফয়জুল করীম বলেন, “পিআর (আনুপাতিক ভোট) পদ্ধতি নিয়ে যারা একমত, শুধু তাদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যেহেতু বিএনপি এতে রাজি নয়, তাই তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে তারা রাজি হলে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।”
বিএনপির প্রতি তার সাম্প্রতিক কঠোর সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষিপ্ত নই। কিন্তু জনগণ বিএনপির চাঁদাবাজি, কোন্দল, মারামারি দেখে বিরক্ত। আমি শুধু তাদেরই অনুভূতি তুলে ধরছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মাজার ভাঙার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “মাজার খারাপ কিছু নয়। কেউ সেখানে সেজদা দিলে বুঝিয়ে ফেরানো উচিত, কিন্তু মাজার ভাঙা ঠিক নয়।” মাজার ভাঙা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।