চাঁদাবাজদের রাজত্বে নতুন বাংলাদেশ!

নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে আমরা বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লাখো জনতা রাজপথে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল। অনেকে হারিয়েছেন চোখ, কেউ হারিয়েছেন হাত-পা, অনেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। কিন্তু যে বাংলাদেশ আজ গড়ে উঠছে, সেটি কি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ? নাকি একটি নতুন রূপে পুরনো অন্যায়ের ধারাবাহিকতা?

দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা এখন এতটাই করুণ যে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বাজার, স্টেশন, লঞ্চঘাট, গার্মেন্টস এরিয়া, এমনকি স্কুল-কলেজের আশেপাশেও চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয়। হাটে গেলে চাঁদা, পণ্য পরিবহন করলে চাঁদা, এমনকি ফুটপাতে বসে হকারি করলেও নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়।

এইসব চাঁদাবাজদের পেছনে থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া।অভিযোগ আছে, কিছু পুলিশ সদস্য, কিছু রাজনৈতিক কর্মী ও স্থানীয় ক্ষমতাবানদের মধ্যে অঘোষিত এক জোটে চলছে এই দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব। অথচ প্রশাসন চুপ! পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে।

অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু একজন ভালো মানুষের চেয়েও এই মুহূর্তে দেশের দরকার একজন সক্রিয় ও কার্যকর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি মাসের বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকেন। যেদিন সুস্থ থাকেন, সেদিন থানায় থানায় ঘুরে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় “হিউম্যান ফেইস অফ গভর্নমেন্ট” তুলে ধরেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—কতদিন এভাবে ভিডিও আর ফেসবুক পোস্টে দেশ চালানো যাবে? জনগণ বাস্তব শান্তি চায়, ফেসবুক শান্তি নয়। সামাজিক মাধ্যমে “মানবিক উপদেষ্টা” বানানোর চেষ্টার চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানোই এখন বেশি জরুরি।

দেশের সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতাও আছে। কিন্তু মাঠে এর বাস্তব প্রতিফলন কোথায়? যদি সত্যি সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আন্তরিক হতো, তাহলে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম কিংবা মিটফোর্ডে একের পর এক চাঁদাবাজি, দখলদারি, খু’নের ঘটনা ঘটতো না।

দেশে আজ এমন অবস্থা যে, রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া কিছুই চলে না। “আমি তমুক দলের লোক” বললেই দোকান দখল, রাস্তা দখল, চাঁদা আদায়—সবকিছু বৈধ হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে এক ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া চাওয়ায় প্রাণ হারালেন, আর গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন জীবন দিলেন সত্য প্রকাশের দায়ে। কিন্তু বিচার কোথায়?

সেদিন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে এক প্রবীণ ব্যবসায়ী চাচা বলছিলেন—“আগে দিনে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতাম, এখন দিতে হয় ৬০০!” এটাই কি নতুন বাংলাদেশ? এই কি সেই রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিদিন মিছিল-মিটিংয়ে দাবি করা হয় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

চাঁদাবাজদের হাতে মার খাওয়া, দখলবাজদের হাতে জমি হারানো আর বিচারহীনতার যন্ত্রণায় পুড়ে পুড়ে আজ জনগণ হতাশ, ক্ষুব্ধ। “সংস্কার” শব্দটি শুধু কাগুজে-কলমীয় এক প্রহসনের নাম। বাস্তবে নেই এর প্রভাব, শুধু বুলি আর মিডিয়া শো।

আমরা রাষ্ট্রের কাছে আমাদের মৌলিক অধিকার চাই। সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার চাই। জন-মালের নিরাপত্তা চাই। চাঁদাবাজদের শাস্তি চাই—তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন। আমরা কেবল মুখে নয়, বাস্তব সংস্কারের প্রতিফলন দেখতে চাই।

আমরা সেই বাংলাদেশ চাই যেখানে আইনের শাসন বাস্তবায়িত হবে। যেখানে মানুষ হক কথা বলার অধিকার পাবে, যেখানে সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরবে না।

আমরা আর হাসিনার দুঃশাসনে ফিরতে চাই না, আবার চাঁদাবাজদের জুলুমের দেশেও থাকতে চাই না। আমাদের প্রয়োজন সুশাসন, জবাবদিহি এবং একটি বাস্তবিক অর্থে “নতুন” বাংলাদেশ।

আনসারুল হক ইমরান
-সম্পাদক, নূর নিউজ

এ জাতীয় আরো সংবাদ

৯০ এর ছাত্রনেতাদের মতো কি সমন্বয়কদের পরিণতি?

আনসারুল হক

১৯ জুলাইকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

আনসারুল হক

ভাষা আল্লাহর দেয়া এক অফুরন্ত নেয়ামত: মাওলানা রাব্বানী

নূর নিউজ