জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন, অতিতের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ধারা থেকে বের হতে বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করাসহ সাত দফা আলোচ্যসূচি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের মুখপাত্র ও যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পরে অবশ্যই তার একটি সনদ হতে হবে এবং নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের আলোকে। “জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি নিশ্চিত করার আগে কোন অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা করবেন না” মর্মে সিইসিকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে।
জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা গেলো কিনা, রাজনৈতিক দলগুলো কতটা সুস্থ্য রাজনৈতিক চর্চায় অভ্যস্ত হলো তা বোঝার জন্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দরকার।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে তার দায়িত্ব না থাকার কথা উল্লেখ করেছেন এবং আইনী পরিবর্তনের ধারা অব্যহত থাকার কথা বলেছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন এখনো ঠিক করতে না পারাটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সতর্ক করেছি যে, যদি আপনি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন তাহলেই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেন। অন্যথায় সাম্প্রতিক অতিতের নির্বাচন কমিশনারদের পরিনতি আপনার ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হবে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্মমহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এবং আরেক যুগ্মমহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম।
সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- এর পক্ষ থেকে
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ৭টি মৌলিক প্রস্তাবনাসমূহ হলো,
১) বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলো যেভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে দলীয় এবং ক্ষমতার অশুভ প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত ও ব্যর্থ করেছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন করতে হবে।
২) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বশীল এবং দলনিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও দিক নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় হলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের গৌরব সেনাবাহিনীকে শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নয় বরং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সেনা সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে ও সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় এবং সকল স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে।
৫) শতভাগ জনমতের মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি বা পি.আর. পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
৬) ফ্যাসিস্ট, খুনি, মানবতা বিরোধী অপরাধী ও আধিপত্যবাদী শক্তির এজেন্ট আওয়ামীলীগ ও তার সকল দোসর ও সহযোগী দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা।
৭) দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও খুনিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচন অব্যশই হতে হবে। এবং প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদ অনুসারে নির্বাচন আয়োজনের জন্যই আমরা এই প্রস্তাবনাগুলো ও সতর্কবার্তা তুলে ধরেছি।