চব্বিশকে হৃদয়ে ধারণ করা মানে এই নয় যে ৭১-কে অবজ্ঞা করব: ছাত্র জমিয়ত 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ,আকাঙ্ক্ষা আর অর্জনের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ছিল আগামীর বাংলাদেশ যেন পথ না হারায়, একটি বসবাসযোগ্য দেশ গড়ে ওঠে, যেখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ থাকবে না এবং সামাজিক ও নাগরিক অধিকার নিরাপদ থাকবে।

আজ সোমবার (১৮ আগস্ট ) দুপুর ২টায় রাজধানীর পল্টনস্থ ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: আকাঙ্ক্ষা ও অর্জন শীর্ষক সেমিনারে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এ সব কথা বলেন।

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিদওয়ান মাযহারীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাদ বিন জাকিরের সঞ্চালনায় পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাযহারী, প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, সহ প্রচার সম্পাদক, মাওলানা নুর মোহাম্মদ কাসেমি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।

মাওলানা আফেন্দী আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও, আমরাই মালিক এই মনোভাবের মধ্যে তার চরিত্র থেকে গেছে। কেউ যদি এই গণঅভ্যুত্থানের একক কৃতিত্ব নিতে চায়, সেটিও ফ্যাসিবাদেরই বহিঃপ্রকাশ।

তিনি আরও বলেন, আমরা ’২৪-কে হৃদয়ে ধারণ করি, তবে এর মানে এই নয় যে ’৭১-কে অবজ্ঞা করব। শহীদদের সর্বদা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করব, একইভাবে ৪৭-কেও। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে, এটি রাজনীতির সৌন্দর্য। তবে শত্রুতা, প্রতিহিংসা কাম্য নয়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম কাউকে শত্রু মনে করে না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য হলেও বিভাজন গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। পাশাপাশি ছাত্র জমিয়তের কর্মীদের প্রতি আহবান থাকবে ব্যক্তিত্ব গঠনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বলেন, আকাঙ্ক্ষা মানুষের অনেক কিছুই থাকে। কী অর্জন করেছি বা সামনে কী অর্জন করতে পারব সেটাই আসল বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই দেশে একটা সংগ্রামের পরই ক্রেডিট নিয়ে লড়াই শুরু হয়ে যায়। ৭১-এর ক্রেডিট নিয়ে আজও দ্বন্দ্ব শেষ হয়নি। ক্ষমতার পালাবদলে ক্রেডিটও বদলে যায়। ৭১ আপামর জনগণের সংগ্রাম থাকলেও, একটি দল ৭১-কে কেন্দ্র করে চেতনার ব্যবসা করছে।ঠিক তেমনি ২৪-এর আন্দোলনও ছিল বাংলাদেশের সকল মানুষের আন্দোলন; কিন্তু সত্যিকারের যোদ্ধাদের নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। তাই ছাত্র জমিয়তের কর্মীদের প্রতি আমাদের আহ্বান তোমরা প্রশিক্ষিত হবে, অশালীন বক্তব্য বা কটু ভাষা ব্যবহার করবে না। লক্ষ্য থাকবে, আগামীর নেতৃত্ব তোমাদেরকেই নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে রিদওয়ান মাযহারী বলেন, এক বছর আগে আমরা ভেবেছিলাম আশার আলো দেখব, অর্জনের কথা বলব। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে জনগণের কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হয়নি, বরং আমরা এই হিসাব টানলে দেখা যাবে ইতিহাসের ব্যর্থ জাতি হয়ে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম দেশে একটি সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হোক, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে আসুক, শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারুক, চাকরিপ্রার্থীরা ন্যায্য সুযোগ পাক, কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাক, আর রোগীরা যেন সহজে চিকিৎসা ও ওষুধ পেতে পারে। কিন্তু এর কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র আয়োজন পর্যন্ত অডিটোরিয়ামে করার সুযোগ দেওয়া হয়নি, আজ এখানে করতে পারছি—এটাকেই হয়তো ক্ষুদ্র অর্জন বলতে হচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণভাবে বর্তমান ইন্টেরিম সরকারের।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংস্কারের নামে আর কোনো সময়ক্ষেপণ নয়, এখন প্রয়োজন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও জমিয়তের আহ্বানে ছাত্র জমিয়ত দেশের দুর্দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।

বন্ধু প্রতিম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এম এম মুসা, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিএম আমীর জিহাদী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মিশকাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আহসান আহমদ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মিলন, জাগপা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, ইসলামি ছাত্র ফোরাম বাংলাদেশের আহবায়ক প্যানেলের সদস্য সাব্বির আহমেদ।

আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র জমিয়ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাউসার আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হাসান নাইম, সহ সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, সহ সাধারণ সম্পাদক মারুফ বিল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আহমাদ আল গাজি, নির্বাহী সদস্য সাইফ বিন জামাল প্রমুখ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলবৃন্দ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

১২ দিনে প্রবাসী আয় ৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা

নূর নিউজ

নির্বাচন করোনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: বলেছেন সিইসি

আনসারুল হক

হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়নি: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

নূর নিউজ