পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর : নতুন প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের সম্ভাবনা

পাকিস্তানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সফর নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপট বদলেছে বহুমাত্রিকভাবে। এই সফরকে “অভূতপূর্ব” বলা হচ্ছে কারণ শুধু প্রটোকল ও আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে নয়, বরং সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাব্য নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিতও এতে নিহিত আছে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এর পেছনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আওয়ামী সরকারের যুদ্ধাপরাধের ইস্যু, এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবস্থান। সেই কারণেই গত ১৫ বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কার্যত স্থবির ছিল। সেই স্থবিরতাকে ভাঙার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দারের সফরটি গুরুত্ব বহন করে। তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় ঢাকায় বিশেষ বিমানে এসেছেন, আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছেন, এবং পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ছয়টি দলিলে স্বাক্ষর, একান্ত বৈঠক ও সম্মানিত আপ্যায়ন ইঙ্গিত দেয়—বাংলাদেশও এই সফরকে গুরুত্ব দিয়েছে, যদিও নিজের সীমারেখা এঁকে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—বাংলাদেশে প্রায় হারিয়ে যাওয়া প্রভাব ক্ষেত্র কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করা। তবে সম্ভবতঃ এ কাজ সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর খেলোয়াড়দের উপস্থিতি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে নতুন বাস্তবতায় নিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রত্যাশা যত বড়ই হোক না কেন, বাংলাদেশ স্বাভাবিকীকরণের বাইরে অতিরিক্ত কোনো প্রতিশ্রুতিতে যেতে আগ্রহী নয়।

অতীতের ক্ষত ভুলে সম্পর্ক পুনর্গঠন সম্ভব কি না—এটাই এখন মূল প্রশ্ন। বাংলাদেশের জন্য অর্থনীতি, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যই মূল অগ্রাধিকার। অপরদিকে পাকিস্তান চাইবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে। তাই উভয় পক্ষের স্বার্থে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও বাস্তবমুখী আলোচনার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

ইসহাক দারের এই সফর হয়তো দ্বন্দ্ব মেটায়নি, বরং আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। এটাই এই সফরের বড় সাফল্য। তবে সম্পর্কের নতুন যাত্রা কতদূর এগোবে, তা নির্ভর করবে দুই দেশের সদিচ্ছা, বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা এবং আঞ্চলিক শক্তির সমীকরণের ওপর।

বাংলাদেশকে অবশ্যই সতর্ক, কৌশলী এবং ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ ইতিহাসের ভার একদিকে থাকলেও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা অন্যদিকে—এ দুইয়ের সমন্বয় করাই হবে কূটনৈতিক বিচক্ষণতার আসল পরীক্ষা।

আনসারুল হক ইমরান
সম্পাদক, নূর নিউজ ২৪

এ জাতীয় আরো সংবাদ

চাঁদাবাজদের রাজত্বে নতুন বাংলাদেশ!

আনসারুল হক

নিশ্চয়ই, আপনার ওপর অশুভ জ্বিন সওয়ার হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টাকে চরমোনাই পীর

আনসারুল হক

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা কি আদৌ কার্যকর হবে?

নূর নিউজ