জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, বর্তমান ইন্টেরিম সরকার অনিয়মের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শ না করে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের জন্য তিন বছর মেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করি জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমাদের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে এরা নাক গলাবে। সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারসহ নানান অনৈসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রমোট করা এই কার্যালয়ের মূল টার্গেট। বাংলাদেশের শান্ত পরিবেশে এই ব্যর্থ কার্যালয়ের কোনো দরকার নেই। ফিলিস্তিনে এই সংস্থার অফিস থাকলেও আজ গাজা যেন ইজরাইলের হাতে এক বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। অথচ এই কার্যলায় মুখে কুলুপ এঁটে দিয়ে বসে আছে।আমরা মানবাধিকারের নামে কোনো পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের পক্ষে নয়। খুব দ্রুত সময়ে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৩টায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন ও সর্বপ্রকার বাতিলের আস্ফালনের প্রতিবাদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়ত উলামা বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে সিলেটের কানাইঘাট বাজারে বিশাল গণ-মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত সভাপতি এসব কথা বলেন।
ঐতিহ্যবাহী দারুল উলূম মাদ্রাসা থেকে উত্তর বাজার হয়ে কানাইঘাট থানা প্রদক্ষিণ করে রামিজা পয়েন্ট হয়ে গণ-মিছিলটি বিক্ষোভ সমাবেশ স্থলে মিলিত হয়। দেড় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিলের সারি ও ব্যাপক উপস্থিতি যেন ছিল অস্তিত্বের জানানস্বরূপ। মূলত জাতিসংঘের কান্ট্রি অফিস ও সর্বপ্রকারের বাতিলের আস্ফালনের প্রতিবাদে গণ-মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হলেও এটি ছিল কানাইঘাটে দুই জমিয়তের প্রথম কোনো যৌথ প্রোগ্রাম। ফলে আলেম উলামার পাশাপাশি সাধারণ জনতার উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। ঐতিহ্যবাহী কানাইঘাটের মানুষ এমনিতেই আলেমপ্রিয় আবার দুই জমিয়তের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে সাধারণ জনতা আনন্দিত। ২০০৪ সালে চারদলীয় জোটে যাওয়া না যাওয়ার রেষ থেকে অরাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামা গঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ২০ বছর পর বিগত ১৩-১১-২০২৪ ইংরেজি তারিখে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (২৩ নং নিন্ধিত) ও জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ (অরাজনৈতিক) নির্বাচনী সমঝোতাত ঐক্যবদ্ধ হোন।
বিক্ষোভ সমাবেশে দারুল উলূম কানাইঘাটের শায়খুল হাদীস খলিফায়ে বায়মপুরী শায়খ মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস লক্ষীপুরীর সভাপতিত্বে এবং মুফতি ইবাদুর রহমান ও কারী মাও. হারুন আহমদ এর যৌথ পরিচালনায় তেলাওয়াত করেন মুশাহিদিয়া কেরায় বিভাগের প্রধান কারী সাজ্জাদুর রহমান।
সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা বাংলাদেশের সভাপতি, খলিফায়ে ফেদায়ে মিল্লাত, দারুল উলূম কানাইঘাটের শায়খুল হাদীস আল্লামা আলিম উদ্দীন দুর্লভপুরী।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সভাপতি, সিলেট ৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) এর আগামী দিনের কান্ডারি শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে জাতিসংঘ কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের কোনো দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না। কাজেই যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চুক্তি থেকে ইন্টেরিম সরকারকে ফিরে আসতে হবে।
সভায় প্রস্তাবনা পাঠ করেন জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ এর সিনিয়র সহসভাপতি, পূর্ব সিলেট আযাদ দীনী এদারা বোর্ডের শিক্ষাসচিব মাও. শামসুদ্দিন দুর্লভপুরী।
আরো বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি, জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাও. জয়নুল আবেদীন, জমিয়তের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক সিলেট-৪আসনে জমিয়ত মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মুহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শায়খে লক্ষীপুরীর দুআ ও নসিহতের মাধ্যমে সভার সমাপ্ত হয়।