আল্লাহ তাআলা কোরআন অবমাননাকারীর জন্য যে কঠিন শাস্তি রেখেছেন

  • আবদুল্লাহ বিন আলমগীর

মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষ আলোর পথ, সত্য ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করে—

ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ۛۖ ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ
“এ সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি পথপ্রদর্শক পরহেযগারদের জন্য।”
(সূরা বাকারা: ২)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন—

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ
“রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। এটি মানবজাতির জন্য হেদায়েত, স্পষ্ট দিকনির্দেশনা এবং সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী।”
(সূরা বাকারা: ১৮৫)

আরেক স্থানে আল্লাহ ঘোষণা করেন—

اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَاِنَّا لَہٗ لَحٰفِظُوۡنَ
“নিশ্চয় আমিই এ কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।”
(সূরা হিজর: ৯)

কোরআনের মর্যাদা ও গুরুত্ব

সাহাবি হযরত আবু জর গিফারি (রাঃ) বর্ণনা করেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট নসিহত প্রার্থনা করি। তিনি বলেন, “তুমি তাকওয়া অবলম্বন করো। কারণ তাকওয়া সকল নেক আমলের মূল।” আমি আবার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, “কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস করো। কারণ এটি দুনিয়াতে তোমার জন্য নূর এবং আখেরাতের জন্য অমূল্য ধনভাণ্ডার।”
(ইবনে হিব্বান)

অতএব তাকওয়া ও কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কই মুমিনের জীবনের মূল ভিত্তি। যে অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকে, সে গুনাহ থেকে বিরত থাকে এবং সর্বদা সৎপথে অটল থাকে।

কোরআন অবমাননার ভয়াবহতা

কোনো মুসলমানের পক্ষে কোরআন অবমাননা করার কথা চিন্তাও করা যায় না। কিন্তু যদি কেউ কোরআনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, অবমাননা করে কিংবা উপহাস করে—তাহলে সে ইসলামের দৃষ্টিতে মুরতাদ বলে গণ্য হবে। ইসলামী শরীয়তের বহুপ্রাচীন ফিকহী বিধান অনুযায়ী, এমন অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন—

اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَاَرۡجُلُہُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ ۚ ذٰلِکَ لَہُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি হলো—হত্যা, শূলীতে চড়ানো, হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা। এ হলো তাদের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা, আর আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি।”
(সূরা মায়িদাহ: ৩৩)

মুরতাদের পরিণতি

মুরতাদের পরকালের শাস্তি সম্পর্কেও আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন—

وَمَنۡ یَّرۡتَدِدۡ مِنۡکُمۡ عَنۡ دِیۡنِہٖ فَیَمُتۡ وَہُوَ کَافِرٌ فَاُولٰٓئِکَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُہُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَالۡاٰخِرَۃِ ۚ وَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
“তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারা জাহান্নামবাসী হবে—সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
(সূরা বাকারা: ২১৭)

উপসংহার

পবিত্র কোরআন হলো আল্লাহর কালাম, বিশ্ব মানবতার হিদায়াতের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এটি তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অবমাননা করার অর্থ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা। এমন ঘৃণ্য কর্মের শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই ভয়াবহ। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো কোরআনকে ভালোবাসা, সম্মান করা, তেলাওয়াত করা এবং এর শিক্ষা অনুসারে জীবন গঠন করা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া, লালবাগ, ঢাকা

এ জাতীয় আরো সংবাদ

অজুতে যেসব কাজ করা সুন্নত

নূর নিউজ

কোরআন তিলাওয়াত করে স্বর্ণপদক পেলেন ফেনীর আরাফাত

নূর নিউজ

আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায়ের সওয়াব

নূর নিউজ