- মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী
৫ আগস্টের গণ-আন্দোলনের পর ইসলামী ঘরানার দলগুলোকে জোট গঠনের লক্ষ্যে একাধিক বৈঠকে বসতে দেখা গেছে। প্রস্তাবিত এই জোটের মূল ভিত্তি—প্রতি আসনে ইসলামপন্থীদের পক্ষ থেকে একজন একক প্রার্থী; অর্থাৎ ইসলামপন্থীদের জন্য একটি মাত্র ব্যালট বাক্স। নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক উদ্যোগ, যা দেশের তাওহীদি জনতার কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পাঁচটি ইসলামী দল—জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি—দফায় দফায় বৈঠক করছে। এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দলগুলোর নিজ নিজ কার্যালয়ে এবং উদ্দেশ্য একটাই—ইসলামী ঐক্য।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ইসলামী জোট গঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইসলামী দলের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের খবর আমরা শুনিনি বা দেখিনি।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই ২৯৪টি আসনে নিজস্ব প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জমিয়ত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রত্যেকেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত।
এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে—এই পরিস্থিতিতে ইসলামী ভোট এক বাক্সে কীভাবে যাবে?
দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ যে একটি একক ইসলামী ব্যালট চায়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো পর্যন্ত কোনো আসনে জোটগতভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। বরং প্রত্যেকটি দল নিজের মতো করে প্রার্থী ঘোষণা করে চলেছে।
শুধু বক্তব্য, বৈঠক আর সদিচ্ছায় জোট গঠন সম্ভব নয়। বাস্তবে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে পুরো উদ্যোগটাই শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে।
নির্বাচন ইস্যু নিয়েও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট। কেউ কেউ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা স্বাগত জানালেও, আবার কেউ কেউ তাতে আপত্তি তুলেছে। কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি তুলেছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামি সাম্প্রতিক ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকও বয়কট করেছে।
এখনো নির্বাচনের অনেকটা সময় বাকি। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—ইসলামী জোট আদৌ বাস্তব রূপ নেবে?