নূর নিউজ: জিলহজ¦ মাস মুসলমানদের জন্য একটি ফজিলতপূর্ণ মাস। এ মাসে আমলের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। কিন্তু না জানার কারণে অনেকেই হেলায় হেলায় কাটিয়ে দিতে দেখা যায়। তাই এ মাসের বিশেষ ৫টি আমলের বিষয়ে মুসলমানদের জ্ঞাত করানোর জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস। আসুন, জানি।
(১) প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা (২) চুল-নখ না কাটা।
(৩)আরাফার দিন রোজা রাখা।
(৪)তাকবীরে তাশরীক বলা।
(৫)স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা।
হাদীস সমূহ:
(১) প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা: জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত দিনে সম্ভব হলে নফল রোযা রাখা (কুরবানির দিনে নয়) আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা, যথা: নফল নামায, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদির মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত: আবু হুরায়রা রা. বলেন রাসূল (সঃ) বলেছেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেছেন, এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়।
(২) চুল-নখ না কাটা: যারা কুরবানী করবে তাদের জন্য যিলহজ্বের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করবে, তারা যেন [এই ১০ দিন] চুল ও নখ না কাটে।
(৩) আরাফার দিন রোজা রাখা: প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজ্বে নফল রোযা রাখা।(তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)
ফযীলত:
আবু কাতাদা রা. বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
(৪) তাকবীরে তাশরীক বলা:
যলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হলঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।
(৫)স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা:
১০, ১১ অথবা ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে,তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান।
ফযীলত:
যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। সাহাবাগণ পুনরায় আবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। সাহাবাগণ আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।
কঠোর হুশিয়ারি:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে উপরোক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: মাওলানা নুরুল আমিন
পরিচালকঃ কওমী একাডেমী,
খতিব, বাইতুন নুর জামে নগরকান্দা, ফরিদপুর