নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পবিত্র কোরআন অবমাননার ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে পুলিশ অপূর্ব পালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেলে জনরোষে তিনি আহত হন এবং পরে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। রবিবার ভোরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন ইসলামি দল, আলেম-ওলামা, ইসলামী সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কোরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব ও পেছনের ষড়যন্ত্রের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাওহিদী জনতার বিক্ষোভসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামিক জনকল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের বিবৃতি
ইসলামিক জনকল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি আব্দুল হান্নান ফয়েজী বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআন আল্লাহর কালাম, বিশ্বমানবতার জন্য হিদায়াত ও মুক্তির পথ। এর প্রতি অবমাননা করা শুধু একটি ধর্মীয় অপরাধই নয়, বরং মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। মুসলিম জাতি কখনো কোরআনের অবমাননা সহ্য করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা সমাজে অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। কোরআনের মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।’
মুফতি ফয়েজী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশব্যাপী সকল ইসলামী শক্তি ও সাধারণ মানুষকে সংযম প্রদর্শন করে কোরআনের মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের বিবৃতি
জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি খোরশেদ আলম কাসেমী বলেন, ‘পবিত্র কোরআন বিশ্বমানবতার হিদায়াতের আলোকবর্তিকা। এর প্রতি অবমাননা করা ঈমান ও ইসলামের সাথে সরাসরি শত্রুতা করার নামান্তর। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার ঘটনায় গোটা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে যে আঘাত লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি—অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও কোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
মুফতি খোরশেদ আলম কাসেমী মুসলিম জনতাকে ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি আস্থা রাখি। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে জনসাধারণের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তাই আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেবে।’