জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, গণহত্যার বিচার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা, এবং বিচারকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই বলেছেন, এতো রক্ষক্ষয়ী একটি গৌরবময় গণঅভ্যুত্থানের পরে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি নিশ্চিত করা, হত্যাকারীর বিচার করা এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের উৎপাত বন্ধ করার মতো গণদাবী নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা লাগবে তা চিন্তাও করি নাই।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, পিআর নিয়ে আমরা বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। কথা বলেছি। দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর চায় মর্মে একাধিক জরিপে উঠে এসেছে। এখন পিআর নিয়ে আমরা রাজপথে আন্দোলন করতে চাই না। বিএনপি যদি জনতার ওপরে আস্থা রাখতে পারে তাহলে পিআরে তাদের সমস্যা কি? তারা ৯০% ভোট পেয়ে ২৭০ আসন নিয়ে এককভাবে দেশে পরিচালনা করুক; আমাদের তো সমস্যা নাই। বিএনপি জনতার ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না কেন?
আপনারা পিআর প্রশ্নে গণভোট দেন। জনতা যদি পিআরের পক্ষে মত না দেয় তাহলে আমরাও আর দাবী করবো না।
শায়েখে চরমোনাই বলেন, আমাদের দাবী স্পষ্ট। সংস্কার করতে হবে, জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি দিতে হবে, বিচার দৃশ্যমান হতে হবে এবং পিআরে নির্বাচন হতে হবে। এটা জনতার দাবী। কেন আপনারা এই দাবী মানছেন না? সমস্যা কোথায়? নাকি ভারত চায় না বলে জুলাইয়ের আইনী স্বীকৃতি দিতে ও বিচার করতে গড়িমসি করছেন? সংস্কার ও বিচারের আগেই যদি নির্বাচন র্নিবাচন করেন তাহলে আমরা ধরে নেবো সরকার কোন দল বিশেষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বলেন, যুগপৎ আন্দোলন হলো, একই দাবীতে যার যার মতো আন্দোলন করা। যুগপৎ আন্দোলন কারো নেতৃত্বে হয় নয়। কিন্তু কেউ কেউ এই যুগপৎ আন্দোলনকে বিশেষ কোন দলের নেতৃত্বে বলে বর্ণনা করছেন। এটা যথার্থ না। সংবাদ প্রচারে আরো সতর্ক হতে হবে সাংবাদিকদের।
সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম মাধ্যমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনার মান খুবই খারাপ। সেখানে ভাষা, বিজ্ঞান, গনিত ও তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষক নিয়োগ না করে গানের শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ঐক্যমত কমিশনে আমরা বিগত ৫ মাস ৫ দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন নিম্নকক্ষে পিআরের বিষয়টা আলোচনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছি; তখনই আমরা রাজপথে এসেছি। ঐক্যমত কমিশন বলে, ওপরের নির্দেশে পিআকে তারা এজেন্ডাভুক্ত করতে পারছে না। আমরা জানতে চাই, কারা সেই ওপরে থাকা শক্তি?
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতেয়াজ আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কেবল নির্বাচনের জন্য না। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারই ছিলো মুল লক্ষ্য। সেই সংস্কার এই আমলেই করতে হবে। নির্বাচনের পরে সংস্কার করার যে কথা বলা হচ্ছে তার ওপরে আস্থা রাখা যায় না। ৫ আগষ্টের পরে সামান্য সুযোগ পেয়েই সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীর যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তাতে নির্বাচনের পরে সংস্কারের চিন্তাও করা যায় না।
গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাউয়ুম, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাকি, মাওলানা খলিলুর রহমানসহ কেন্দ্র ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমে এসে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
আগামীকাল এই দাবীতে বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বাড্ডা ও ধোলাইখাল এলাকায় দুইটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে । ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই উভয় সমাবেশ উপস্থিত থাকবেন।