প্রবাসীদের দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আওয়ামী লীগের স্মারকলিপি ও গণঅনশন কর্মসূচি পালন

আমিনুল হক কাজল, কাতার প্রতিনিধি
কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৪ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট রাষ্ট্রদূত মারফত পেশ করে এবং তা আদায়ের জন্য গণ অনশন কর্মসূচি পালন করে কাতার আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ ও কাতার আওয়ামী পরিবার।

গতকাল সকাল দশটা থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে শফিকুল ইসলাম প্রধানের নেতৃত্বে কাতার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে। সকাল এগারটায় রাষ্ট্রদূত দূতাবাসে আসলে নেতৃবৃন্দ তাঁকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং মিডিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠ করে শোনান সংগঠনের সভাপতি সফিকুল ইসলাম প্রধান।

স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন যে, কাতারে চার লক্ষ প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের প্রবাসে ও দেশে যেসব সমস্যা আছে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্ণগোচর হলে তা অচিরেই সমাধান হবে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রবাসী বান্ধব সরকার বলে অভিহিত করে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সকল সমস্যা সমাধানে দূতাবাস সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে একযোগে কাজ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশাল করার আহবান জানান।

রাষ্ট্রদূত মোঃ নজরুল ইসলাম ধৈর্যধরে স্মারকলিপিতে উল্লিখিত বক্তব্য শোনেন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তিনি সর্বোচ্চ সেবা প্রদানেরও আশ্বাস দেন।
পরে রাষ্ট্রদূতের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ গণঅনশণ ভঙ্গ করেন।

এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাতার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন খান পাশা, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ বাবুল, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি শাহ আলম, ইফতেখার মারুফ, লেবু মিয়া, মহিবুর রমহান স্বপন সহ শতাধিক নেতা-কর্মীবৃন্দ।

স্মারকলিপিতে উল্লিখিত দাবিসমূহ:

০১. বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন নিজস্ব ভবন না থাকায় কাতারের আল হেলাল এলাকায় প্রায় দুই যুগ আগে ফ্যমিলি এরিয়ায় ভাড়া নেওয়া বাড়িটি এখন চার লক্ষাধিক প্রবাসীর চাহিদা পূরণে অপ্রতুল। সময়ের প্রয়োজনে বিস্তৃত কলেবরে নতুন বাড়ি ভাড়া নেওয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির আগের চুক্তি শেষ হলেও এখনও নতুন চুক্তি হয় নি। বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছে দ্রুত তিন বছরের চুক্তি করার জন্য। তা না হলে যে কোন সময় বাড়িওয়ালা দূতাবাস তালাবদ্ধ করে দিতে পারে। চুক্তি করলে তিন বছরের আগে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। এ বাড়িটি চার লক্ষাধিক প্রাবসীর সেবাদানের জন্য খুবই অপ্রতুল। বাড়িটির সীমিত কক্ষ থাকায় প্রবাসীদের জন্য উপযুক্ত অভ্যর্থনা কক্ষ নেই। এমতাবস্থায় তারা ক্ষরতাপে কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে ঘণ্টা পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তাই দেশের সম্মান ও প্রবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণে দ্রুত বর্ধিত কলেবরে উন্মুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত পার্কিং-এর ব্যবস্থাসম্পন্ন দূতালয় ভাড়া নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে দ্রত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

২. কাতারে প্রতি বছর প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে প্রবাসী আয়। বাড়েনি প্রবাসীদের সেবার মান। দুই লক্ষ প্রবাসীর সেবার জন্য যে জনবল ছিল তা চার লক্ষাধিক প্রবাসীর সেবা দান করে আসছে। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিরলস পরিশ্রম করে গেলেও প্রতিদিন শতশত প্রবাসী চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করাতে না পেরে কর্মস্থথলে ম্লানমুখে ফেরত যাচ্ছে প্রবাসীরা। লোকবল শংকটের কারণে ই-পাসপোর্ট, এন.আই.ডি কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হাতে পেতে কাতার প্রাবসীদের বেশ কয়েক বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে। বেশিরভাগ প্রবাসী ছুটি নিয়ে দূতাবাসে আসে। ছুটি পাওয়া তাদের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। অধিকন্তু একদিন ছুটি কাটালে অনেক কোম্পানী দুই দিনের বেতন কাটে। ক্রমবর্ধমান প্রাবাসীদের কাজের চাপ মেটাতে দূতাবাসে বর্তমানে যে কর্মকর্তা-কর্মচারি আছে তার দ্বিগুণ কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ এখন প্রবাসীদের অন্যতম দাবি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ দাবি মেটানোর জন্য আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

০৩. নারী কর্মীদের জন্য দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে সার্বক্ষণিক সেইফ হোম-এর ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে বিপদে পড়লে তারা নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতে পারে বা দেশে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করতে পারে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের থাকা, খাওয়া, পরা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। নারী কর্মীদের বেশিরভাগ নিয়োগকর্তাই আরবি ও ইংরেজি ভাষী। তাই তাদে জন্য সার্বক্ষণিক সার্ভিস দিতে দূতাবাসে ত্রিভাষী (আরবি+ইংরেজি+বাংলা) মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
০৪. প্রবাসীদের বিনামূল্যে দ্রুত আইনী সহায়তার জন্য বিয়ভিত্তিক আইনজীবী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
০৫. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা বিশ্বের প্রবাসীরা যাতে প্রবাস থেকে ভোট প্রদান করতে পারে সেজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে এন.আই.ডি কার্ড সহজ উপায়ে সম্পন্ন করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
৫. বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে প্রবাসীদের মরদেহে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিবহনের দাবি জানাচ্ছি।
৬. বর্তমান প্রবাসী ও প্রত্যেক প্রবাসফেরত প্রবাসীকে সহজ শর্তে গৃহনির্মাণ, ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে বিনাসুদে লোন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৭. প্রবাসীদের পরিবারবর্গ বিভিন্ন সময় প্রতিবেশী, সন্ত্রাসী তথা চাঁদাবাজদের লালসার শিকার হতে হয়। তাই সারা দেশের সকল প্রবাসী পরিবার ও তাদের সম্পদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
৮. প্রতিটি এলাকার সরকারি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবাসীদের সন্তানরা যাতে সুযোগ পায় সে লক্ষ্যে প্রবাসী কোটা বরাদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।
৯. দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রবাসীর জন্য রাজধানী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে সরকারি ফ্ল্যাট ও প্লট সরাসরি বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
১০. প্রবাসী উদ্যোক্তাদের দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রবাসী উদ্যোক্ত জোন- চালু করে উপযুক্ত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার সুযোগ প্রদানে দাবি জানাচ্ছি।
১১. প্রবাসীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশে প্রেরণ করে সি.আই.পি উপাধি পাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। অনেক প্রবাসী আছে জীবনের একাটা বড় অংশ প্রবাসীসমাজের কল্যাণে (সময়,শ্রম,অর্থ) ব্যয় করছে। তাদের কোন প্রাপ্তি নেই। তারাও তাদের কর্মের জন্য যদি Socially Important Person (SIP) সম্মাননা পায় তবে অনেকেই প্রবাসীদের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আপনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
১২. কাতারে বিভিন্ন কমিউনিটির সামাজিক-সাংস্কৃতি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিভিত্তিক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কমিউনিটি সেন্টার আছে, যা আমাদের নেই। এ অভাব পূরণে বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের জন্য আমরা আপনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
১৩.আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দেশীয় পণ্য বিদেশে পাঠাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। তবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অতি লাভের আশায় পণ্যমান বজায় রাখছে না। যার ফলে অন্য দেশের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় বাজারে টিকতে পারছে না আমাদের পন্য। রফতানি পণ্য বাজারে পাঠানের আগে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার ব্যাপারে আপনার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১৪. বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে বিদ্যমান অবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খুবই নিম্মমানে তা আপনি নিজেই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে বুঝতে পেরেছেন আশা করি। তার উপর বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিম্নমানের আচরণ আমাদের প্রতিনিয়তই আহত করে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা নানাভাবে বিমান ও বিমান বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দ্বারা মজুর-কামলা বলে প্রতিদিন নিগৃহীত হচ্ছে। অথচ সত্যিকার অর্থে মধ্যপাচ্য প্রাবসীরাই নিজের হাতখরচ রেখে বাকি টাকা বৈধ পথে দেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভে বড় অবদান রাখছে। কভিডের সময়ও সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণের রেকর্ড গড়েছে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরাই।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

২০২২ সালে ঢাকা সফরে আসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

নূর নিউজ

নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে চাইলে, জানাতে হবে ৩০ তারিখের আগে: ইসি আলমগীর

নূর নিউজ

আমিরাত সফরে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

নূর নিউজ