প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি তুলেছে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি ইসলামপন্থী দল। তাদের হুঁশিয়ারি—এ দাবির ব্যতিক্রম হলে ইসলামপ্রেমিক জনগণ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে এ দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম ও মুফতি ইউসুফ সুলতান। তারা ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন—
১. প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে স্বতন্ত্র ও যোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ।
২. এ পদে আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল বা আল হাইয়াতুল উলয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস শিক্ষার্থী নিয়োগ।
৩. ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বতন্ত্র নিয়োগপ্রক্রিয়া।
৪. ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’ সংশোধন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের বিধান সংযোজন।
৫. ধর্ম মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়ন।
৬. অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মের শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা।

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, লেখাপড়ার মানের অবনতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ সরকার গানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে ইসলামপ্রেমীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামপন্থীদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ক্ষমতায় যেতে হবে। জনগণ এখন ইসলামের পক্ষে মানসিকভাবে প্রস্তুত, কিন্তু নেতৃত্ব সঠিকভাবে না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাসে তাদের ধিক্কার দেবে।

জামায়াত নেতা খলিলুর রহমান মাদানী অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদী সরকারই গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে, নইলে বিপদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় অনেক বিদ্যালয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করাতে হচ্ছে। মুসলিম জনগোষ্ঠী চায় তাদের সন্তানরা ধর্মীয় শিক্ষা পাক। এজন্য বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। তিনি আসন্ন নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ বলেন, গান শেখা ঐচ্ছিক, কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক। তাই গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ধর্মীয় কারিকুলাম বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত যেখানে নেওয়া হয়, সেখানেই ইসলামপন্থীদের বসতে হবে। এখন সেই সময় এসেছে।

সেমিনারে সমকামিতা প্রসঙ্গও উঠে আসে। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইনক্লুসিভ’, ‘বহুত্ববাদ’ ইত্যাদি শব্দের আড়ালে দেশে সমকামিতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

আলোচনা শেষে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আবরার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী। এছাড়া বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন ও হেফাজতের মাওলানা হাসান জামিল প্রমুখ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

তাৎপর্যময় জিলহজের প্রথম দশক

আনসারুল হক

এখনো হজে যাওয়ার দারুণ সুযোগ

নূর নিউজ

ইবরাহিম আ. যেভাবে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন

নূর নিউজ