বাঙালিদের হাতে বাবাকে জীবন দিতে হয়েছে, এটাই সব থেকে কষ্টের: শেখ হাসিনা

পঁচাত্তরে সপরিবারে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কথা স্মৃতিচারণ করে তার বড় কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্য, পঁচাত্তরে কিন্তু শিশুরাও মুক্তি পায়নি। কারবালার ময়দানেও এ রকম ঘটনা ঘটেনি, শিশু-নারীদের কেউ হত্যা করেনি। কিন্তু বাংলার মাটিতে যাদের জন্য আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছেন, বছরের পর বছর কারাগারে ছিলেন, যাদের একটি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন- সেই বাঙালিদের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে কষ্টের, সব থেকে দুঃখের।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- আমাদের শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে, সুন্দর জীবন পাবে। জাতির পিতা এ দেশের শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলা করতে। তিনি যখন খেলতেন বাচ্চাদের সঙ্গে মনে হতো তিনি নিজেই যেন একটা শিশু হয়ে যেতেন। এটাই ছিল তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় দিক, তার সরলতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বজনহারা বেদনা নিয়ে শরণার্থীর মতো বিদেশে সময় কাটাতে হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি ফিরে এসেছিলাম। এমন একটি অবস্থায় যেখানে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, আল বদর, রাজাকারদের রাজত্ব ছিল। তবু আমি ফিরে এসেছিলাম আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করবার জন্য; এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য; এ দেশের শিশুদের যেন আগামী দিনে আমাদের স্বজনহারা বেদনা নিয়ে বাঁচতে না হয়; তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।’

‘যে শিশুদের জাতির পিতা অত্যন্ত ভালোবাসতেন, আর ভালোবাসতেন বলেই আমরা যখন ২১ বছর পর সরকার গঠন করি, তখনই আমরা ১৭ মার্চ শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দিই। কারণ তিনি শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পরপরই আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন তাতে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।তাছাড়া শিশু অধিকার আইন তিনি করে দিয়ে যান। সেই সঙ্গে শিশুদের সুরক্ষার জন্য কেয়ার অ্যান্ড কোটেশন সেন্টার যেটা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত, সেটাও তিনি প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের অর্থাৎ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শিশুদেরও যেন ভালোভাবে লালন-পালন হয় সেই ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন আমরা শিশুদের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা-দীক্ষায় যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে- পিছিয়ে না পড়ে সে জন্য প্রতিটি এলাকায় স্কুল তৈরি করে দেওয়া, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরাও অনেক স্কুল জাতীয়করণ করি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং বিভিন্ন অপকর্ম থেকে যাতে তারা মুক্তি পায় সেই ব্যবস্থা নিই।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি ২০০৮ সালে, শিশুদের যাতে কোনো ব্যবহার করা না হয়, যাতে তাদের জীবনের শঙ্কা তৈরি হতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা জাতীয় শিশু শ্রমনীতি-২০১০; পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১০; জাতীয় শিশুনীতি-২০১১ প্রণয়ন করি।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নেওয়া আরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।

শিশু দিবসের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত আমরা গড়ে যেতে চাই। তার জন্য আমি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও করে দিয়ে গেলাম। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে মর্যাদা পেয়েছি, এই মর্যাদা ধরে রেখে আগামী দিনের বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। আজকে শিশু হবে আগামী দিনে সেই কর্ণধার।’

এ জাতীয় আরো সংবাদ

নির্বাচনের পরিবেশ ও আমাদের কার্যক্রম দেখে বিদেশিরা সন্তুষ্ট

নূর নিউজ

খলেদা জিয়াকে যদি স্লো পয়জন দেওয়া হয়, সেটা বিএনপির নেতারাই দিয়েছে

নূর নিউজ

গুলিস্তানে পাগল নাচলেও ২০ হাজার মানুষ হয় : তথ্যমন্ত্রী

নূর নিউজ