বাহরাইনে যেভাবে ইসলাম পৌঁছেছে

বাহরাইনের আবদুল কাইস গোত্রের ‘মুনকিজ ইবনে হায়্যান’ নামক জনৈক ব্যক্তি ব্যবসার সুবাদে মদিনায় আগমন করে। মদিনার একটি গলিতে সে বসেছিল। এমন সময় তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করলেন রাসুল (সা.)। সে রাসুল (সা.)-কে চিনত না।

তবু তাঁর দিকে তার দৃষ্টি পড়ামাত্রই সে দাঁড়িয়ে গেল। রাসুল (সা.)-এর নজর পড়ল তার দিকে। তিনি তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন এবং তার পরিচয় নিয়ে জানতেন সে বাহরাইনের মানুষ। তখন সেখানকার হালহকিকত জিজ্ঞাসা করলেন। সেখানকার নেতাদের নাম ধরে ধরে খোঁজখবর নিলেন। বিশেষ করে তার শ্বশুর গোত্র-প্রধান মুনজির ইবনে আইজ ওরফে আশাজের খোঁজখবর নিলেন। এতে মুনকিজ দারুণভাবে বিস্মিত হলো এবং রাসুল (সা.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মুসলমান হয়ে গেল। কিছু দিন রাসুল (সা.)-এর খেদমতে থেকে সুরা ফাতিহা ও সুরা ইকরা শিখে নিল। এরপর ফিরে গেল নিজ এলাকায় তথা বাহরাইনে। যাওয়ার সময় রাসুল (সা.) তার হাতে তুলে দিলেন বাহরাইনের কতিপয় নেতার নামে বেশ কটি চিঠি। মুনকিজ দেশে আসার পর নিজের ইসলাম ও রাসুল (সা.)-এর প্রেরিত পত্রগুলোর কথা গোপন রাখল বেশ কিছু দিন। এমনকি প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছেও। তবে অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে নামাজ ইত্যাদি আদায় করত। বাইরের মানুষের কাছে গোপন রাখা গেলেও স্ত্রীর কাছে আর কিছু দিন গোপন থাকে। স্ত্রী মাঝেমধ্যে দেখে ফেলে তার নামাজ, তিলাওয়াত ইত্যাদি। স্বামীকে কিছু না বলে বিষয়টি পিতা আশাজকে জানায়। আশাজ জামাতা মুনকিজের কাছে বিষয়টি খোলাখুলি জানতে চাইলেন। তখন মুনকিজ সব কিছু খুলে বলে এবং রাসুল (সা.)-এর পত্রটিও তুলে দেয়। আশাজ ছিলেন গভীর বুদ্ধি ও গাম্ভীর্যের অধিকারী। পত্রটি পাঠ করে তিনি অভিভূত হলেন। মুসলমান হয়ে গেলেন। এরপর স্বীয় প্রশাখা-গোত্র আসার ও মুহারিবের মানুষকেও ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিল। তারাও মুসলমান হয়ে গেল। এভাবে মুনকিজ ও মুনজির (শ্বশুর-জামাই)-এর মাধ্যমে বাহরাইনে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। (আল-মিনহাজ শরহে মুসলিম ১/১৮১ ; মিরকাত শরহে মিশকাত ১/৮৮)
বাহরাইন থেকে আবদুল কাইস গোত্রের দুটি প্রতিনিধিদল রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়েছিল। প্রথম দলটি মক্কা বিজয়ের আগে; পঞ্চম হিজরি সনে কিংবা তারও আগে। তাদের সংখ্যা ছিল ১৩-১৪। মুনজির ইবনে আইজ ওরফে আশাজ (রা.) ছিলেন এই দলের অন্যতম সদস্য। (আত তাবাকাত ৬/৮০)

দ্বিতীয় দলটি তাবুক যুদ্ধের পরে নবম হিজরি সনে; তাদের সংখ্যা ছিল ৪০।

প্রথম দলটি মদিনায় প্রবেশের আগেই রাসুল (সা.) তাঁদের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে অগ্রিম সুসংবাদ দিলেন এই বলে যে অচিরেই তোমাদের মাঝে উপস্থিত হতে যাচ্ছে ছোট্ট একটি দল, যারা পূর্ব দিকে অবস্থানকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম। এই সংবাদ শোনার পর ওমর (রা.) সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদের স্বাগত জানালেন। তাদের রাসুল (সা.)-এর বার্তা শোনালেন। অতঃপর তাদের সঙ্গে মদিনায় প্রবেশ করে রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলেন।

আশাজ (রা.) ছাড়া অন্যরা প্রবল আবেগাপ্লুত হয়ে দ্রুত সওয়ারি থেকে নেমেই রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলো এবং রাসুল (সা.)-এর হাতে চুম্বন করতে লাগল। কিন্তু আশাজ (রা.) আবেগে ধৈর্য হারালেন না। ধৈর্যের সঙ্গে সওয়ারি থেকে নামলেন। সফরের পোশাক পরিবর্তন করে নতুন পোশাক পরিধান করলেন। অতঃপর রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলেন। তাঁর এমন আচরণে রাসুল (সা.) খুশি হলেন এবং তাঁর প্রশংসা করে ইরশাদ করেন, ‘তোমার মধ্যে দুটি গুণ আছে, যা মহান আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। তা হলো, গাম্ভীর্য ও ধৈর্য। (ফাতুহুল বারি, ৮/৮৫)

মদিনার বাইরে সর্বপ্রথম তাঁদের (বাহরাইনের অন্তর্গত) জুওয়াসা অঞ্চলে জুমার নামাজ কায়েম করা হয়। (বুখারি ১/১২২, ২/২৬৭; সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৩/১১৩)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

দুবাই আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আবেদন করবেন যেভাবে

নূর নিউজ

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরাইলি হামলায় শহীদ শতাধিক ফিলিস্তিনি

আনসারুল হক

কেউ মারা গেলে নিকটাত্মীয়দের যা করা জরুরি

নূর নিউজ