উন্নত প্রযুক্তি, মানসম্মত চিকিৎসা এবং তুলনামূলক কম খরচে সেবা পাওয়ার আশায় ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের বিকল্প হিসেবে চীনের কুনমিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশি রোগীরা। বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও নিউরো-সংক্রান্ত জটিল রোগের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বাড়ছে।
ঢাকা থেকে মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টার ফ্লাইট দূরত্বে অবস্থিত ইউনান প্রদেশের এই শহরটিকে স্বাস্থ্যসেবার নতুন গন্তব্যে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছে চীন সরকারও। কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স, ফুওয়াই হসপিটালসহ বেশ কয়েকটি সরকারি ও আধাসরকারি হাসপাতাল ইতিমধ্যেই বিদেশি রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত।
চিকিৎসা খরচ ও সেবা
কুনমিংয়ে চিকিৎসা খরচ সিঙ্গাপুরের তুলনায় কম এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও সাশ্রয়ী। চিকিৎসকের পরামর্শ ফি মাত্র ১৫ ইউয়ান (প্রায় ২৬০ টাকা)। স্পাইন সার্জারির মতো জটিল অপারেশন এবং ১০ দিন হাসপাতালে থাকার খরচ প্রায় ১০ হাজার ইউয়ান (প্রায় ১.৭৫ লাখ টাকা)। রোগী ভর্তি হওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ইউয়ান ডিপোজিট দিতে হয়, যা চিকিৎসা শেষে প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় করা হয়।
প্রধান চ্যালেঞ্জ
তবে ভাষা অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি রোগী ও চিকিৎসা পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা কার্যক্রমের সময় চীনা ভাষা বুঝতে না পারার কারণে সেবা গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দক্ষ দোভাষী (ইন্টারপ্রেটার) নিয়োগ ও অনলাইন যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।
ভিসা ও সিরিয়াল সংকট
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং ভিসা নীতির কড়াকড়ির ফলে চিকিৎসার জন্য ভারত সফর কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের রোগীদের ভিড় বেড়েছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং বর্তমানে চীনে। তবে কুনমিংয়ে ভিসা সহজীকরণ, আবাসন, খাবার এবং সরকারি হাসপাতালে সিরিয়ালের জটিলতা এখনো বড় প্রতিবন্ধকতা।
সরকার ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ
মার্চ ২০২৫-এ বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রতিনিধি দল কুনমিং সফর করে। চিকিৎসক, রোগী ও সাংবাদিকসহ ৩১ সদস্যের দলটি চীনের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ট্রাক মেডি সার্ভিসেস ও সিওক হেলথকেয়ারের কর্মকর্তারা জানান, ভাষা ও সিরিয়াল সংকট সত্ত্বেও রোগীদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক। অনেকে চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. খোরশেদ আলম জানান, চীনের অনেক হাসপাতাল ঢাকায় সার্ভিস সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করছে। এতে ভিসা, চিকিৎসা পরামর্শ এবং যাবতীয় তথ্য আগে থেকেই দেশে বসেই নেয়া সম্ভব হবে।
চীনের চিকিৎসা প্রযুক্তি, সেবা এবং ব্যয়ের ভারসাম্য বিবেচনায় কুনমিং এখন বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে এটি সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের চেয়েও জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হতে পারে।