- ইকবাল জিল্লুল মজিদ
শিশুদের মাঝে সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা হওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। তবে অবহেলা করলে এই সাধারণ সমস্যা জটিল রোগে রূপ নিতে পারে। শিশুর শরীর তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়ায় এই সময় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কার্যকর এবং নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিতে শিশুর সর্দি-ঠান্ডা
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রোগীকে দেখা হয়। প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত অবস্থার ভিন্নতা অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করতে হয়। শিশুর হাঁচি, সর্দি, কাশি, চোখ বা নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর—প্রত্যেকটি উপসর্গ অনুযায়ী আলাদা আলাদা ওষুধ প্রযোজ্য হয়।
শিশুর সর্দি-ঠান্ডায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ
১. Aconite Napellus (১) – হঠাৎ ঠান্ডা লাগার পর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, ভয়, দুশ্চিন্তা এবং মুখমণ্ডল লাল হলে ব্যবহার হয়।
২. Belladonna (২) – হঠাৎ জ্বর, মুখমণ্ডল গরম, চোখ টকটকে লাল, মাথাব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্রযোজ্য।
৩. Bryonia Alba (৩) – শুকনো কাশি, কথা বললে বা নড়াচড়া করলে কাশি বাড়ে, শিশু বারবার পানি চায়।
৪. Pulsatilla Nigricans (৪) – নাক দিয়ে ঘন হলুদ বা সবুজ সর্দি পড়ে, শিশু কান্নাকাটি করে, মায়ের কোলে থাকতে চায়।
৫. Hepar Sulphuris (৫) – ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলতা থাকলে প্রযোজ্য।
৬. Kali Bichromicum (৬) – ঘন সর্দি, টানতে কষ্ট হয়, নাক বন্ধ, সর্দি রাবারের মতো আঠালো।
৭. Sambucus Nigra (৭) – শিশু ঘুমানোর সময় নাক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়। ঠান্ডা রাতের সময় বৃদ্ধি পায়।
৮. Arsenicum Album (৮) – হাঁচি, চোখ ও নাক দিয়ে জ্বালাপোড়া সহকারে পানি পড়া, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব করলে।
৯. Ferrum Phosphoricum (৯) – ঠান্ডার শুরুতেই শিশুর শরীরে হালকা জ্বর ও দুর্বলতা দেখা দিলে।
১০. Antimonium Tart (১০) – শিশুর বুক ভারী লাগে, ঢোঁক গিলে কাশি হয়, ঘন কফ আটকে থাকে।
১১. Gelsemium (১১) – ভাইরাল ঠান্ডা, শরীর ম্যাজম্যাজে, মাথাব্যথা ও চোখ ভারী অনুভব হলে।
১২. Nux Vomica (১২) – নাক দিয়ে পানি পড়া, রাতে নাক বন্ধ, সকালে খারাপ লাগে, খিটখিটে মেজাজ।
খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক নির্দেশনা
- শিশুকে হালকা গরম পানি পান করাতে হবে
- ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম ও ঠান্ডা পানীয় একেবারে নিষেধ
- ঘরে তৈরি গরম স্যুপ ও আদা-রসুন মেশানো খাবার উপকারী
- কমলা, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়ানো ভালো
- বুকের দুধ পানরত শিশুকে অবশ্যই নিয়মিত দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে হবে।
জরুরি মুহূর্তে করণীয়
- শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট হয় বা হেঁচকি দিয়ে শ্বাস নেয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- ঘন ঘন বমি, খিচুনি, জ্ঞান হারানো, গা খুব বেশি গরম হয়ে গেলে অবহেলা না করে হাসপাতালে নিতে হবে।
- ঘরে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করা যেতে পারে।
- কোন ওষুধ প্রয়োগের আগে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
পরিশেষে
শিশুর সর্দি-ঠান্ডা প্রতিটি পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সময়মতো সঠিক ওষুধ এবং সচেতন অভিভাবকত্বই পারে শিশুকে সুস্থ রাখতে।
লেখক : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, পরিচালক কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রাম, রাডডা এমসিএইচ এফপি সেনটার, মিরপুর ১০, ঢাকা -১২১৬।
হাআমা/