আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজরের বিরুদ্ধে। তাকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস-এ-তে প্রেস ব্রিফিংয়ে মেজর সাদিককে সেনা হেফজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সেনা সদরের সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে দলটির বাছাইকৃত ক্যাডারদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কাটাবন ও পূর্বাচল এলাকায় দেওয়া হয় এসব প্রশিক্ষণ। এর মধ্যে গত ৮ জুলাই ভাটারা থানা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের দুই দিন আগেই একটি টোকেন সরবরাহ করা হয়।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এসব ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক।
তাকে গত ১৭ জুলাই নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাদেকুল হক সাদেক নামের ওই মেজর বর্তমানে তাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদের মধ্যে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা) গ্রেপ্তার করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক কক্সবাজারের রামু ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মেজর সাদিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তার স্ত্রী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমাইয়া জাফরিন।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সাদেক ও সুমাইয়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সময় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আর সরকার উৎখাতের এই পরিকল্পনার বিষয়টি কলকাতায় বসে সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাকে সহযোগিতায় সেখানে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সরকার উৎখাতের এই পরিকল্পনায় কৌশলগত সহযোগিতা করছেন দিল্লিতে অবস্থান করা পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান পলাতক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান।
এদিকে আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত অভিযোগে সেনা হেফাজতে নেওয়া সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্তে আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশক্রমে সেনা আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএসপিআর আরো জানায়, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পূর্ণ তদন্ত শেষ হওয়া সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।