সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা অবশেষে প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৩০ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এতে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং সামাজিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ।
এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে এবং দেশটি পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে চলেছে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ আদেশের ফলে ৫১৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তবে আসাদপন্থী গোষ্ঠী, আইএসআইএল এবং ইরান ও তাদের মিত্রদের ওপর আরোপিত পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল থাকবে।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা এমন একটি সিরিয়া দেখতে চাই, যা অভ্যন্তরীণভাবে ঐক্যবদ্ধ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে— এমন একটি সিরিয়া গোটা অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনবে।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই দেশটির ওপর নানা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল ‘সিজার অ্যাক্ট’, যা আসাদ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জারি করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই আইনের অধীনে থাকা কিছু নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে শিথিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা আনা পলিনা লুনা কংগ্রেসে একটি যৌথ বিল উত্থাপন করেছেন, যাতে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছেন, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ তকমাটি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এক সময় আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামে পরিচিত এই নেতা আল-কায়েদার সিরীয় শাখা আল-নুসরা ফ্রন্টের প্রধান ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গঠন করেন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন।
চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরবে এক বৈঠকে ট্রাম্প আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে “দৃঢ় ও আকর্ষণীয় নেতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আল-শারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করবেন এবং অতীতের উগ্রবাদী সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করবেন।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সম্প্রতি আসাদপন্থী আলাওয়ি সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। আল-শারা অবশ্য আশ্বস্ত করে বলেছেন, সিরিয়া আর কোনো প্রতিবেশী দেশের জন্য— বিশেষ করে ইসরায়েলের জন্য— হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।