জিয়ার লাশ নিয়ে সংসদে বিতর্কে জড়ালো বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে জাতীয় সংসদে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস বিল, ২০২১ এর ওপর আলোচনাকালে এ বিতর্ক হয়।

এ বিষয়ে পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এখানে যে জিয়ার কোনো লাশ নেই তা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত। একটি বাক্স আছে। তিনি সেটা সরিয়ে ফেলার দাবি তোলেন।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, লাশ থাকলে তার স্ত্রী-সন্তানকে দেখানো হয়নি কেন?

তিনি বলেন, তখন ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি লাশ থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। যদি লাশ থেকে থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে।

ওই বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মন্ত্রী ও সাংসদেরা বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি পাকিস্তানের দোসর।

হারুন বলেন, জিয়াউর রহমান জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম ব্যাটালিয়নে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সরাসরি মাঠে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার সময় যে সেক্টর কমান্ডাররা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে করেছেন, তাদের মধ্যে জেড ফোর্সের ২৮৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এই সেক্টরের দুজন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন।

এ বক্তব্যের জবাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, জিয়াউর রহমান যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, বাংলার বাণীর কোনো কপি আর্কাইভে রাখা হয়নি। বহু তথ্য–উপাত্ত তারা সরিয়েছে।

কে এম খালিদ বলেন, ‌‘সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা, সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে? সেখানে লাশ আছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান? তারই উচিত এ প্রশ্ন করা, ওনার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কি না? বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করা উচিত। আপনারা দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারও মৃতদেহ আছে? নাকি অন্য কারও মৃতদেহ আছে?’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদ্‌ঘাটনে ভয়ের কী আছে? আপনাদের দলের নেত্রীকে বলেন, যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা নিয়ে, সাজা স্থগিত নিয়ে বসবাস করছেন। আইনের সুযোগ থাকলে তার নেতৃত্বে কমিটি করেন।’

পরে এই বিলের সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন বলেন, ‘পরনিন্দা, বিষোদ্‌গার ভালো নয়। সংসদের লবিতে পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা আছে, “তোমরা জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করিও না এবং সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশ্রিত করিও না”।’

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল, সে সংসদে আওয়ামী লীগের ৩৯ জন ছিলেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জিয়াউর রহমানের জানাজায় তারা উপস্থিত ছিলেন। সংসদে শোকপ্রস্তাব নেয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের লাশের পোস্টমর্টেম হয়েছে, সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারও হয়েছে। এগুলো সত্য ঘটনা। অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তাঁর এ বক্তব্যের সময় সরকারি দলের অনেক সদস্য হইচই করে প্রতিবাদ জানান।

বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, আফ্রিকান একটা প্রবাদ আছে, সিংহ যদি ইতিহাস লেখতে পারত, তাহলে প্রতিটি বিজয়গাথা শিকারির হতো না। সিংহেরও বিজয়গাথা থাকত। মুশকিল হলো, সব সময় ইতিহাস লেখে জয়ীরা।

তিনি আরো বলেন, এত বড় সংসদে মাত্র দু–তিনটা বিরোধী কণ্ঠ শোনা যায়। সে সময়ও সরকারি দলের সাংসদেরা অসহিষ্ণু আচরণ করেন।

তিনি বলেন, আর্কাইভ করতে হলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, বীর উত্তম, সেক্টর কমান্ডার। সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।

রুমিনের বক্তব্যের সময়ও সরকারি দলের সাংসদেরা প্রতিবাদ করেন।

এসব বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রুমিনের দিকে ইঙ্গিত করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জন্মের পর মুখে কিছু মধু দেওয়া হয়। কারও কারও মুখে মনে হয় পিতা-মাতা দিতে ভুলে গেছেন।

তিনি বলেন, মৃত্যুর ৪০ বছর পর সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে এলে সমস্যা কোথায়। জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই, প্রমাণ করতে সমস্যা কী।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ইতিহাস বিকৃতি তো বিএনপিও করে। তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এই বিষয়ে আমাদের সুপ্রীম কোর্টের নির্দশনা আছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনোই বলতে শুনেনি, দেখিনি উনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, সেটা বন্ধের আহ্বান জানাতে পারে বিএনপি।

ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ১৯৮১ সালের ২০ জুন আমি সংসদে বিএনপি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। আমি সেদিন বলেছিলাম আপনারা প্রমাণ করেন। ওই বাক্সে কোনো লাশ আছে কী না। আমি দুই দিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আর না পারলে জনমনের সন্দেহই প্রমাণিত হবে। আজ ৪০ বছরেও একটি ছবি দেখাতে পারেননি। প্রমাণই করতে পারেন নি। একটি বাক্স দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। একটা বাক্স এনে বলেছেন জিয়াউর রহমন লাশ। এই বিভ্রান্ত দূর হয়ে গেছে। ওখানে যে বাক্সটা আছে তা সরিয়ে লুইকানের নকশা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

জাল নোটের দৌরাত্ম্য রুখতে অভিযানের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নূর নিউজ

আমরা একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছি

নূর নিউজ

আকাশ থেকে খুঁজলেও দেশে কুঁড়েঘর পাওয়া যাবে না: তথ্যমন্ত্রী

আলাউদ্দিন