নিউইয়র্ক থেকে আবু তাহের:
সদ্য প্রকাশিত নূর নিউজ-এর বিশেষ সাময়িকী “শোকার্ত ২০২০।। যে সকল আলেমকে হারালো বাংলাদেশ”-এর উপর নিউইয়র্ক জ্যাকসন হাইট্স আন-নূর মসজিদে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে সাতটায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আন-নূর কালচারাল সেন্টার, নিউইয়র্কের প্রিন্সিপাল মুফতী মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আন-নূর কালচারাল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, উলামায়ে কেরাম নবীগণের (সা.)-এর উত্তরসূরী। তাদের সম্মান করা উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ২০২০ আমাদের জন্য বিষাদের বছর। দেশের অনেক শীর্ষ আলেম বিদায় নিয়েছে সে বছর। যারা মানুষকে ডাকতো হকের পথে। শোনাতো কুরআনের বাণী। পৌঁছাতো রাসূলের কথা।
তিনি বলেন, যাদের হৃদয়গ্রাহী আলোচনা শুনে দ্বীনের পথে আসতো অগণিত মানুষ। হেদায়াতের আলোয় আলোকিত হতো মানুষের চিত্ত-মন-হৃদয় ও অন্তর। তাদের হারিয়ে আজ আমরা দিকভ্রান্ত নাবিকের ন্যায় ছুটছি, তাদের দরদমাখা নসিহত আর আমাদের কর্ণকুহরে বেজে উঠবে না।
তিনি আরও বলেন, মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল অক্লান্ত পরিশ্রম করে বরেণ্য এ মরহুম আলেমগণের সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্মকে এক মলাটে একত্রিত করেছেন। আর ‘নূর নিউজ এটিকে ‘বিশেষ সাময়িকী’ হিসেবে প্রকাশ করেছে। আমি মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল ও নূর নিউজ কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশা করি, তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবে।
মুফতী মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, জগতে যখন একজন আলেমের ইন্তেকাল হয়, তখন গোটা পৃথিবী এর যন্ত্রণা ভোগ করে। জগতবাসীর হৃদয় গভীরে রক্তক্ষরণ ঘটে। কারণ আলেমগণ দুনিয়াতে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। তারা নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে অন্যদের হেদায়েতের পথ দেখায়। ২০২০ সালে আমরা বাংলাদেশে অভিভাবকতুল্য এমন বহু শীর্ষ আলেমকে হারিয়েছি। আমাদের মনে হয়েছে, সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও এই আলেমদের জীবন, কর্ম ও অবদান তুলে ধরা প্রয়োজন। এতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের বর্ণাঢ্যময় জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে। এই কর্তব্যবোধ থেকেই ২০২০ সালে বিদায় নেয়া আলেম মনীষীদের নিয়ে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। ২০২১ সালেও যাদের হারিয়েছি তাদের জীবনী প্রকাশের কাজও চলমান। আশা করি, আপনাদের দোয়ায় এটিও যথাসময়ে প্রকাশিত হবে ইনশাল্লাহ।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (সিও, আইটিভি), মাওলানা মাহমুদুল ইসলাম (ইমাম ও খতীব, উডসাইড মাদানি মসজিদ), মাওলানা আজির উদ্দিন (ইমাম ও খতিব, বায়তুল আমান মসজিদ, ব্রঙ্কস), বিশিষ্ট লেখক মাওলানা রশীদ জামিল (প্রেসিডেন্ট, দারুল আহনাফ-নিউইয়র্ক), মাওলানা হামিদুর রহমান আশরাফ (প্রিন্সিপাল, দারুল আহনাফ-নিউইয়র্ক), মাওলানা আতাউর রহমান (ইমাম ও খতীব, আমেরিকান মুসলিম সেন্টার (এএমসি)-জ্যামাইকা), মাওলানা মুহাম্মদ মনজুরুল করীম (ইমাম ও খতীব, হাজী ক্যাম্প জামে মসজিদ-জ্যামাইকা), মাওলানা মুফতি উসমান গণি (ইমাম ও খতীব, মসজিদ আত-তাওফিক,কুইন্স), মাওলানা ক্বারী ইয়াসিন (ইমাম, বায়তুর রিদওয়ান মসজিদ-কুইন্স), হাফেজ মাওলানা নুরুন্নবী (শিক্ষক, আন-নূর কালচারাল সেন্টার), মাওলানা ইয়াসিন (ইমাম, আন-নূর মসজিদ, জ্যাকসন হাইট্স) প্রমূখ ইমাম ও উলামা মাশায়েখবৃন্দ।
আমন্ত্রিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে আলেমদের চিরবিদায়ে দেশের ধর্মীয় এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার ময়দানে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছিল, যা এখনও বিদ্যমান। সে সব আলেমদের নিয়ে এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
তারা আরও বলেন, এই সাময়িকীতে ৪২ জন আলেমের সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্মকে একত্রিত করা হয়েছে। প্রত্যেক আলেমের আলোকিত জীবনের নানা অধ্যায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বিশিষ্ট আলেম মুফতী মুহাম্মদ ইসমাইলের এই প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, আপনাদের সবার দোয়া ও সহযোগিতা পেলে তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন।
পরিশেষে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি থেকে মুক্তিলাভে আল্লাহর রহমত কামনা, মরহুম আলেমগণের রুহের মাগফিরাত, মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে।